উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পরিচয়হীন হিসেবে মর্গে থাকা ৫ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিক করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন খান।
জসীম উদ্দীন খান জানান, দগ্ধ পাঁচ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাব। এখনও একটি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
সিআইডির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিমান বিধ্বস্তের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরের দিন সিআইডি’র ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা ঢাকা সিএমএইচ-এ রক্ষিত অশনাক্ত মৃতদেহ ও দেহাংশ থেকে মোট ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। এই নমুনা বিশ্লেষণ করে পাঁচ জন নারীর ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মোট ১১ জন সদস্যের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে পাঁচ মৃতদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে, মো. ফারুক হোসেন ও সালমা আক্তার দম্পতির মেয়ে ওকিয়া ফেরদৌস নিধি, মো. বাবুল ও মাজেদা দম্পতির মেয়ে লামিয়া আক্তার সোনিয়া, মো. আব্বাস উদ্দিন ও মোসা. মিনু আক্তার দম্পতির মেয়ে আফসানা আক্তার প্রিয়া, মো. শাহাবুল শেখ ও মিসেস মিম দম্পতির মেয়ে রাইসা মনি এবং আব্দুল কাদির ও উম্মে তামিমা আক্তার দম্পতির মেয়ে মারিয়াম উম্মে আফিয়া। তাদের ডিএনএ প্রমাণিত হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এদিকে এ ঘটনায় মাহতাব নামে সপ্তম শ্রেণির আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আইএসপিআর জানিয়েছে, এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩০।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহতাবের মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরের ৮৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৫০ জন আমাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। এরমধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১২ জন এবং ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনসহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে দুজন শিক্ষিকা ছিলেন। এখন পর্যন্ত আমাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে মোট ৪৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আশঙ্কারজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
প্রেস উইংয়ের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়েছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বর্তমানে ৪৩ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর সিএমএইচে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের এবং ভর্তি আছেন ১৫ জন। বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ঢাকার ৬টি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ওই ঘটনায় দগ্ধ ৫৫ জন।
সবশেষ তথ্য থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুর থেকে আসা চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে রোগীদের তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সকালে জানানো হয়, মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। তবে দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহতাব নামের আরেক শিশুর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন।
এদিকে, গুরুতর দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসায় সহায়তা করতে ঢাকায় আসা ভারতের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল দল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন।