Main Menu

পাসপোর্টের পরিচালক ‘টাকার কুমির’ তৌফিকের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

পাসপোর্টের ‘টাকার কুমির’ নামে পরিচিত যে কয়জন কর্মকর্তা রয়েছেন, তার মধ্যে ডাটা অ্যান্ড পার্সোনালাইজেশন সেন্টারের পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান অন্যতম। বিপুল সম্পদের মালিক পাসপোর্টের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলা নম্বর ২। গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুদক এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নুরুল আনোয়ারও এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, ২০০৪ সালে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন তৌফিকুল ইসলাম খান। তার প্রথম পোস্টিং হয় যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। চাকরি জীবনে তিনি নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ঢাকার হেড অফিস, খুলনা এবং বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ের পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে তিনি সহকারী পরিচালক ছিলেন ৭ বছর, উপপরিচালক ছিলেন ৮ বছর এবং উভয় পদে মোট ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে পরিচালক পদে পদোন্নতি পান। এ সময় তিনি সর্বসাকুল্যে যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ৬৫ হাজার এবং বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন তুলছেন। অভিযোগ রয়েছে, চাকরি জীবনে তিনি ঢাকায় ৮টি ফ্ল্যাট, ৭টি প্লট ও বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন।

দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, পাসপোর্টের এই পরিচালকের নামে রয়েছে ঢাকার উত্তরায় ১৫শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। সেটি কেনা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। ধানমন্ডিতে রয়েছে ২ হাজার বর্গফুটের প্লট, যা কেনা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। তার মালিকানাধীন গ্রিন রোডে সাড়ে ১২শ’ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট আছে, একেকটির মূল্য ৮০ লাখ টাকা, লালমাটিয়ায় ১৩শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইন্দিরা রোডে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬৫ লাখ টাকায়—ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামে বুকিং দিলেও মূল্য পরিশোধ করেছেন তিনি। শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এটির মূল্য তার ভাই তৌফিকের নামে ‘পরিশোধ’ দেখান। রাজধানীর নীলক্ষেতে আছে ২টি দোকান, একত্রে কেনা হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৬৪ লাখ টাকার।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, যখন যেখানে ইচ্ছে তিনি প্লট কিনেছেন। এর মধ্যে মিরপুর রূপনগর (সম্প্রসারিত) প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট কেনেন ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উত্তরায় ৩ কাঠার প্লটটি কেনেন ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে, বর্তমানে যার বাজার দর ২ কোটি টাকা। রাজধানীর বনশ্রীতে শাশুড়ির নামে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট কিনেছেন, যার বাজার মূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা। তৌফিকুল ইসলাম খানের নিজ জেলা নেত্রকোনায় ১৪.৫৭ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ি রয়েছে। এটি ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় কেনা। নেত্রকোনায় রয়েছে আরেকটি ৬ তলা বাড়ি। কিনেছেন ২ কোটি টাকায়। নেত্রকোনা নিজ গ্রামে এক দাগে কিনেছেন ৪ একর কৃষি জমি, এটির আনুমানিক দাম ১ কোটি ৮০ লাখ। মোহনগঞ্জে ৮০ লাখ টাকায় কিনেছেন একসঙ্গে ১৩ একর জমি।

মোট নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে রয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালংকার আছে ৪৫ ভরি, মূল্য ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কিনেছেন দুটি গাড়ি। একটি ফিল্ডার, আরেকটি নোয়াহ। দুটি গাড়ির মূল্য ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ৭০০ সিঙ্গাপুরের ডলার। ইউরো রয়েছে ৯ হাজার।

দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পাসপোর্ট অধিদফতরের যে কয়জন কর্মকর্তা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক, তার মধ্যে তৌফিকুল ইসলাম খান অন্যতম। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদের তথ্য আসে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মামলা দায়ের করা হয়। ৮ জানুয়ারি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু তৌফিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে, সেখানে তাকে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাকে গ্রেফতারে কোনও বাধা নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে তৌফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.