কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত আগামী ১৩ নভেম্বরের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা এড়াতে মাঠ পর্যায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৩ নভেম্বরের দিন বা তার আগে-পরে কেউ যদি ‘লকডাউন’ কর্মসূচির নামে মাঠে নামার চেষ্টা করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করতে হবে।
এরই মাঝে আইনশৃংখলা বাহিনী ঢাকামূখী লকডাউন সমর্থক ও কর্মীদের রুখতে দেশের সকল জেলায় বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। ঢাকামূখী মহাসড়ক, ট্রেন ও লঞ্চে তল্লাশী শুরু করা হয়েছে। এসব কর্মসূচিত লোক সর্বরাহ করার অর্থ যোগানদাতাদেরও তথ্য সংগ্রহ করে তাদেরও আটক করা হবে। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে আইনশৃংখলা বাহিনীর একাধিক গ্রুপকে কাজে নামানো হয়েছে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাড়তি চেকপোস্ট বসানো, টহল বৃদ্ধি এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত আগামী মঙ্গলবার এই কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈঠকটি আগেভাগে ডাকা হয়।
বৈঠকে একটি বাহিনীর প্রতিনিধি ঢাকায় বিভিন্ন প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানোর প্রস্তাব দেন, যা পরে গৃহীত হয়। এছাড়া বৈঠকে আওয়ামী লীগের বরিশাল অঞ্চলের দুই নেতার নাম উল্লেখ করে তাদের অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ও আলোচনায় আসে। উপস্থিত সদস্যদের কেউ কেউ জানান, ওই দুই নেতা বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করলেও তারা অতীতের মতো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
এদিকে বৈঠকে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার সময় মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের অবস্থান নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত সেনাবাহিনীকে মাঠ থেকে সরানো হবে না; বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের উপস্থিতি বজায় থাকবে।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় কোনোভাবেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হতে দেওয়া। এজন্য প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব বাহিনী প্রস্তুত আছে।”
আগামী ১৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।