ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে সবকিছুতে। আধ্যাত্মিক রাজধানী খ্যাত সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ওলিদের মাজারকে কেন্দ্র করে চলমান অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের আওয়াজ তুলেছেন আলেমরা। এই সুযোগে বিভিন্ন মাজার ভেঙে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির পায়তারা চালাচ্ছে কুচক্রি মহল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মাজারের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সংস্থা-২ শাখা থেকে জারি করা চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে মাজারে পরিকল্পিত হামলা-ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ জারি করেছে।
তবে এ নিদের্শনার আগেই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলেটের বড় দুটি মাজার- শাহজালাল ও শাহপরাণ রাহ.-এর মাজার এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পোশাধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মাজারে নজরদারি করছে পুলিশ। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বাহিনীটি। সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের থানাগুলোকে সতর্কবার্তা প্রদানের পর এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সিলেটের মাজারগুলোতে চলমান অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি তুলেন স্থানীয় আলেমরা। এই অবস্থায় ৮ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ (রাহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শুরু হয়। এর আগে সিলেটের আলেমসমাজ শাহপরাণ মাজার ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওরসের নামে অসামাজিকতা যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেন। এসব বৈঠকে কমিটির নেতৃবৃন্দ ওরসে কোনো অসামাজিকতা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ওরস চলাকালীন তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে সে জন্য আলেম-সমাজের একটি প্রতিনিধি দল মাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন এবং সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রাখছিলেন। শেষদিন (সোমবার দিবাগত) রাতেও তারা এ লক্ষ্যে মাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রাত ২টার দিকে ওরসে আসা মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোক তাদের উপর হামলা করে মারধর শুরু করেন। হামলার শিকার লোকজন এসময় মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা বাইরে অবস্থান নিয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন এসময়।
খবর পেয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকার শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া আলেমসমাজকে উদ্ধার করেন এবং ওরসপন্থীদের উপর চড়াও হয়ে তাদের তাবুগুলো ভেঙে দেন। এসময় দুপক্ষের মাঝে সংঘর্ষে দুপক্ষর ৩০-৩৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত হন অন্তত ৫ জন। পরে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে আলেম-সমাজের কয়েকজন সেসময় অভিযোগ করে বলেন- শুরুতে ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও উত্তেজনা শুরু হওয়ামাত্র তারা সেখান থেকে চলে যায়। শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করেছে একটি তৃতীয় পক্ষ। তারা ওরসে আসা মাদকসেবী ও মাথায় লাল কাপড় বাধা কিছু লোককে পরিস্থিতি অশান্ত করতে উস্কানি দিয়েছে। পরে তারা অতর্কিত আমাদের উপর হামলা চালায়।
সংঘর্ষের পর শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী বলেন- মাজারের ওরসে আসা কিছু পাগল, ফকির ও আলেম-সমাজের প্রতিনিধি দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিছু ভাঙচুর হয়েছে। তবে এখানে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ মাজারে হামলা করতে আসেনি। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। তবে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। এ সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।