শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোরডটকম ডেস্ক: দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ সিলেট সিটি করপোরেশনে রাজত্ব করেন আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত নগর ভবনের দায়িত্বে থাকা কামরান পরিচিতি পান সদাহাস্য রাজনীতিক হিসেবে। তার মেয়াদকালে নগর ভবনের দরজা ছিল উন্মুক্ত। যে কেউ যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি হাজির হতে পারতেন মেয়রের দরবারে।”
“বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্যও উদারহস্ত ছিলেন কামরান। সিলেট নগরকর্তার দরবার থেকে কেউ খালি হাতে ফেরে না বলে একটি কথাও তখন প্রচলিত ছিল সিলেট শহরে। তখন কামরানকে ঘিরে সুহৃদ-বন্ধু-শুভাকাক্সক্ষী থেকে শুরু করে চাটুকার-সুবিধাভোগীদের একটি বলয় গড়ে ওঠে।”
“২০১৩ সালের নির্বাচনে এই সুহৃদ-সুবিধাভোগীদের একটি অংশ কৌশলে ভোল পাল্টে শক্তিশালী করে তোলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে। পরিবর্তনের স্লোগান তোলে আওয়ামীবিরোধী জোট। সাধারণ ভোটারদের একটি অংশকেও নিজেদের দলে ভেড়ায় প্রতিপক্ষ। অভিযোগ ওঠে, আওয়ামী লীগের একটি অংশও সে সময় গোপনে কাজ করে কামরানের বিরুদ্ধে। ফলাফল, তুমুল জনপ্রিয় নেতা থেকে পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয় কামরানকে। নগরের মসনদে আসেন ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিবাজদের শীর্ষ তালিকায় নাম থাকা বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী।”
“প্রথম পরাজয়ে মুষড়ে পড়েন কামরান। বিশেষ করে বন্ধুবলয়ের গোপনে ভোল পাল্টানোর বিষয়টি হতাশ করে তোলে তাকে। নিজেকে অনেকটা গৃহবন্দি করে রাখেন তিনি। এবার সুবিধাভোগীরা একে একে ভিড় করতে শুরু করেন আরিফের দরবারে। কৌশলে আরিফ মন জয় করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও।”
“সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররাও আরিফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে স্থানীয় এমপি ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে চমক দেখান তিনি। তবে ২০১৪ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় আরিফুল হক চৌধুরীর নাম আসার পর দোটানায় পড়ে যান সুবিধাভোগীরা। আবারও ভোল পাল্টাতে শুরু করেন তারা। হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় আরিফুল হক চৌধুরী কারান্তরীণ হলে পুরো দৃশ্যপট বদলে যায় নগর ভবনের।”
“সুবিধাভোগীদের চেহারা সামনে আসার পর আবার চাঙ্গা হয়ে ওঠেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। একসময় জেল থেকে ছাড়া পান আরিফুল হক চৌধুরীও। শত্রু-মিত্র আর সুবিধাভোগীদের চেহারা কিছুটা সামনে আসে তারও। কথা বাদ দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। সড়ক প্রশস্তকরণ, ফুটপাত মুক্তকরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে চমক দেখাতে থাকেন আরিফ। কাজের খাতিরে শত্রু বাড়তে থাকে আরিফের। অন্যদিকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে আধিপত্য বাড়তে থাকে কামরানের।”
“পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদকৃত হকার আর সাধারণ ভোটাররা আবারও আশ্রয় নেন কামরান-শিবিরে।সুশীল সমাজ আর সাধারণ ভোটারদের মন জয়ের মধ্যেই আরিফ-কামরান মন দেন গণমাধ্যমের মন জয়ে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকার সুবাদে গণমাধ্যমের মন জয় সহজ হয়ে ওঠে আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য। নির্বাচনের বছরই তিনি সিলেটের গণমাধ্যমকর্মীদের একাধিক সংগঠনে উদারহস্তে অনুদান দেন। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন কামরান। তবে নিজেদের মধ্যেও বিভক্ত গণমাধ্যমকর্মীদের একেক বলয়ে একেকভাবে আলোচিত হতে থাকেন আরিফ-কামরান।”
“৩০ জুলাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর এখন নতুন করে শত্রু-মিত্র যাচাইয়ের বিষয়টি সামনে এসেছে হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থীর জন্য। দুজনেরই নিজ দলে চলছে গৃহবিবাদ। আওয়ামী লীগের একটি অংশ গোপনে কামরানের বিরোধিতা করলেও আরিফের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে গেছে বিএনপির একটি বড় অংশ। তবে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হয়ে গেলে দলের ভেতরের বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে না এই দুই প্রার্থীকে।”
“২০১৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দেড় যুগের রাজত্ব যখন শেষ হয়, তখন বন্ধু ও সুবিধাভোগীদের অনেকেই তার পাশে ছিলেন না। নির্বাচনের পর কামরানের আপনজনের অনেকেই হয়ে ওঠেন আরিফের নিজের মানুষ। হয়তো সেটা ভাবতেও পারেননি কামরান। নির্বাচনের দিন নিজের পরাজয় আঁচ করতে পেরে ভোট গণণার আগেই ঘরে ফিরে যান তিনি।”
“২০১৮ সাল কী নিয়ে অপেক্ষা করছে, তা তো সময়ই বলে দেবে। তবে সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে একাধিক অনুষ্ঠানে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সামনে কঠিন সময়, বন্ধু-সুহৃদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ক।”