Home » রমজানে আস্তে সবকিছু দাম বাড়তে শুরু

রমজানে আস্তে সবকিছু দাম বাড়তে শুরু

ডেস্ক নিউজ : রোজা ঘিরে নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে যথেষ্ট। চাহিদার অতিরিক্ত আমদানির কারণে কোনো পণ্যের মজুদও রয়েছে পর্যাপ্ত। স্বাভাবিক ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দামও। তার পরও রোজায় চাহিদা বেশি— এমন সব পণ্যের দামই আকস্মিক বাড়তে শুরু করেছে।

এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে বস্তায় (৫০ কেজি) ২০০ টাকার বেশি। একইভাবে বেড়েছে পেঁয়াজ, ছোলা ও ভোজ্যতেলের দামও। যদিও পর্যাপ্ত আমদানির কারণে এবার রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।

রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে যেসব পণ্যের, সেগুলোর একটি চিনি। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে রাজধানীর পাইকারি বাজারে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগেও এ বাজারে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা চিনি বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৪৯০ থেকে ২ হাজার ৫১০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ে ৪৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৫০ টাকা ২০ পয়সা। গতকাল বিকাল ৫টায় একই চিনি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭৩০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তা চিনির দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা বা কেজিপ্রতি ৪ টাকা ৮০ পয়সা।

রমজানে বাড়তি চাহিদার কারণে চিনির মূল্যবৃদ্ধিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারি মিলে প্রতি কেজি চিনি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেসরকারি মিল তা বিক্রি করছে ৫০ টাকায়। রমজানের বাড়তি চাহিদায় কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা দাম বাড়তেই পারে। তবে চিনির কোনো সংকট নেই দেশে।

চিনির সংকট না থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে বণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যেও। তারা বলছে, দেশে চিনির চাহিদা বছরে ১৬ লাখ টন। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই এর চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে পণ্যটি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টন।

রমজানে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ভোজ্যতেল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে সয়াবিন, সুপার পাম ও পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগেও এ বাজারে প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৭০ টাকায়। গতকাল একই তেলের দাম ওঠে ৩ হাজার ১০০ টাকায়। একইভাবে ২ হাজার ৬৮০ টাকার সুপার পাম গতকাল ২ হাজার ৭২০ ও ২ হাজার ৫৮০ টাকার পাম অয়েল এদিন ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

যদিও এ পণ্যেরও ঘাটতি নেই বাজারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে ১৫ লাখ টনের মতো। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই আমদানি হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টন ভোজ্যতেল। এছাড়া পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারদরও পড়তির দিকে।

ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত জানুয়ারিতে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৬৪ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৮৪২ ও মার্চে ৮৩৪ ডলারে। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে পাম অয়েলের দামও টনপ্রতি ১৪ ডলার কম ছিল।

চিনি-ভোজ্যতেলের মতো রমজানে বাড়তি চাহিদা থাকে পেঁয়াজেরও। রোজা শুরুর এখনো ১০ দিন বাকি থাকলেও চড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মানভেদে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সপ্তাহখানেক আগেও একই পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। একইভাবে বেড়েছে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও। এক সপ্তাহ আগে আমদানিকৃত প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২২-২৬ টাকায়। একই পেঁয়াজ গতকাল পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ৩০-৩২ টাকায়।

যদিও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২১ লাখ ৫৩ হাজার টন। চলতি অর্থবছরেও ২১ লাখ ২৬ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

‘তার পরও মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, গত সপ্তাহে পাঁচদিন সরকারি ছুটি ছিল। ওই সপ্তাহে জেলা-উপজেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে রমজানের পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে চলতি সপ্তাহে পাইকারিতে রমজানের পণ্য বিক্রির চাপ বেড়েছে। এছাড়া মহাসড়কে যানজটের কারণে চলতি সপ্তাহে বাজারে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
রোজার আগেই বাড়তে শুরু করেছে ছোলার দামও। দুদিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল এ বাজারে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ছোলা বিক্রি হয় ২ হাজার ৪০০ টাকায়। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হয় মানভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। অথচ গত শনিবারও খাতুনগঞ্জে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা প্রতি মণ ছোলার দাম ছিল সর্বোচ্চ ২ হাজার ২৮০ টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি মণ ছোলা বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, রমজানসহ সারা বছর দেশে ছোলার চাহিদা থাকে ১ লাখ ৮০ হাজার টনের মতো। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার টন। অর্থাৎ চাহিদার অতিরিক্ত ছোলা আমদানি হয়েছে দেশে।
একইভাবে ডালজাতীয় পণ্যের দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সাদা মটরের দাম বেড়েছে মণে প্রায় ১০০ টাকা। সপ্তাহের শুরুর দিকে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সাদা মটর ১ হাজার ২৬ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১২০ টাকা। পাশাপাশি আকস্মিক দাম বেড়েছে আদা, খেজুর এমনকি মুরগিরও।

রমজানের আগে আগে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি নজরে এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সি সফিউল হক বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। বিষয়টি নজরে আসায় ১৩ মে বাণিজ্যমন্ত্রী সব ধরনের ব্যবসায়ীদের ডেকেছেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। সূত্র : বণিক বার্তা

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *