ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সহস্র প্রাণের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশের সূর্যাদয়। যেখানে কারো প্রতি কোন বৈষম্য থাকার কথা নয়। সবার প্রতি সমান সুবিচার করার কথা এবং সেটি তাঁদের অধিকার। এ লক্ষ্যেই ছিল আন্দোলনের উজ্জীবিত হওয়ার মূলমন্ত্র। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সময় রূপ নেয় সরকার পতন আন্দোলনে।
ছাত্র-জনতার সকলেই ঐকমত্য হয়েছিলেন একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার। কিন্তু সেই বৈষম্যহীন শহিদ পরিবারের সদস্যরাই এখন বৈষম্যর শিকার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকারের বিরুদ্ধে শহিদ পরিবারে প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গেল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিলেট নগরীতে কয়েকজন নিহত ও সহস্রাধিক ছাত্রজনতা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা আন্দোলনে নিহত ও আাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। এর প্রেক্ষিতে সিলেট নগরীর নিহত ও আহত পরিবারকে সিসিকের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন সিসিকের তৎকালীন প্রশাসক আবু আহমদ সিদ্দিকী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার। ওই সময় তুরাবের পরিবারের কাছে এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। ওই সময় সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমকে আন্দোলনে শহিদ ও আহত পরিবারকে সিসিকের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের বিষয়টি অবগত করেন।
নগরীতে আন্দোলনে শহিদ পাবেল আহমদ কামরুলের বড় ভাই আলহাদী পিপলুর উক্ত বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং তাঁর পরামর্শক্রমে একটি আবেদন জমা দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সিসিকের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা প্রদান না করায় তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। সর্বশেষ আলহাদী পিপলু গত রোববার যোগাযোগ করলে সিসিকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করা হয়।
সিসিকের হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ, শহিদ পাবেল আহমদ কামরুলের পরিবারের কাছে চেক হস্তান্তর করতে চাইলে তারা সেই চেক গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে শহিদ পাবেল আহমদ কামরুলের বড় ভাই আলহাদী পিপলু জানান, সিসিকের উচিৎ ছিল সকলের প্রতি সমান আচরণ করা। কিন্তু সিসিক আমাদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, তা সত্যেই দুঃখজনক। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বৈষম্যমূলক আচরন মেনে নেয়া কষ্টকর। কেননা একজন শহিদ পরিবারকে বাসায় গিয়ে তাঁর পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে আসা এবং আরেক শহিদ পরিবারের কাছে থেকে আবেদন গ্রহণ করার পরও বারবার ধরনা দিতে হয়েছে। এমন কি আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও বৈষ্যম্য। অন্য পরিবার যেখানে এক লাখ টাকা পেয়েছে আমাদেরকে সেখানে ২৫ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে। যা আমাদের সাথে সিসিকের পক্ষ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণ মনে করছি। কেন্দ্রীয় সমন্বয়রা শহীদ পরিবারের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। তারা আমাদেরকে ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তাই আমরা টাকা গ্রহণ করিনি।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিম সরকার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। কতজন শহিদ পরিবার ও আহত পরিবার কে সাহায্য করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন সংখ্যা বলতে পারেননি। এবিষয়ে জ্ঞাত নয় বলে জানান।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ব্যারিষ্টার নুরুল হুদা জুনেদ বলেন, শহীদ পরিবারের পতি বৈষম্যমূলক আচরণ সত্যিই খুব দুঃখজনক। কেননা তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের এই নতুন বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে ও যাঁরা আত্মত্যাগ করেছে তাদের পরিবারকে কখনো খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাদের প্রতি সম্মান রেখে সর্বদা সকল শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের প্রতি বৈষম্যহীন আচরণ করতে হবে। এনসিপি ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় তাদের যে সমস্যায় পাশে থাকবো।