ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ চলছেই। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবারও অংশ না নেওয়ার বিষয়ে এখনো অনড়। তবে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ‘সংবিধান অনুয়ায়ী’ নির্বাচনের পথেই হাঁটা ছাড়া বিকল্প ভাবছে না সরকারি দল।
এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। ব্যালট বাক্সসহ কিছু মালপত্র কেনার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য সরঞ্জাম কেনার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।বিজি প্রেসসহ সরকারি প্রেসগুলোকে প্রয়েজনীয় ব্যালট পেপারের কাগজ সংগ্রহ করে রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।একেকটা কেন্দ্রে দুই থেকে আড়াই হাজার ভোটার ভোট দেবেন। গতবারের তুলনায় এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। কারণ এবার ভোটার বেড়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের শেষভাগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। এ লক্ষ্যে ভোটগ্রহণের জন্য ৪২ থেকে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র প্রয়োজন হবে। প্রাথমিকভাবে এসবের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য সরকারি ছাপাখানাগুলোর সঙ্গেও প্রাথমিক আলাপ শেষ করেছে। এখন ৭ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। কারো নামে অভিযোগ উঠলে তার জায়গায় অন্য কাউকে দেওয়ার চিন্তা থেকে তালিকায় ১০ শতাংশ বেশি নাম রাখার পরিকল্পনা করছে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মালামাল ক্রয়ের জন্য দরপত্র অহ্বান করা হয়েছে। ভোটগ্রহণের জন্য ৩৪ লাখ ৪০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ৬ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ স্ট্যাম্পপ্যাড, ১৭ হাজার ৪২০ কিলোগ্রাম লাল গালা, ৫ লাখ ৭৮ হাজার অফিসিয়াল সিল, ১১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিং সিল, ৮৭ হাজার ১০০ ব্রাশ সিল, ৬ লাখ ৬৫ হাজার অমোচনীয় কালির কলম ক্রয় করা হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মাহফুজা আক্তার স্বাক্ষরিত দরপত্র আহ্বানপত্রে বলা হয়, ৪ মে থেকে শুরু করে ৩ জুনের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার শেষ দিনেই দরপত্র খোলা হবে। কাজ পাওয়ার ৮ সপ্তাহের (দুই মাস) মধ্যে মালামাল বুঝিয়ে দিতে হবে।
এদিকে এ নির্বাচনের জন্য প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রিম কাগজ প্রয়োজন হবে, যা জুন মাসের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ আনুসারে আগামী জুন থেকে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করা হবে। এ সময় ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রণয়ন ও বিতরণ করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণা ও পরবর্তীকালে ব্যালট পেপার, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, নির্দেশিকা, ম্যানুয়াল, মনিটরিং সেল, প্রচারণা, ভোটকেন্দ্র-ভোটকক্ষ নির্মাণ, কক্ষ সংস্কার, ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকেন্দ্রের মনিহারি দ্রব্য, পরিবহন খরচ, কর্মকর্তাদের ডাক, তার, বার্তাবাহক, জ্বালানিসহ বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী কেনায় অর্থ ব্যয় হবে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সিইসি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, কমিশনের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। জাতীয় নির্বাচনে বিশাল অর্থের প্রয়োজন হয়। সে কারণে অর্থ দ্রুত ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে আগে থেকে বলে রাখতে হয়।
এদিকে আগামী ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে একাদশ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে ইসি। এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইসির জন্য ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই নির্বাচনে ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার ভোট দিতে পারবেন। সূত্র: আমাদের সময়