গোপালগঞ্জে চলছে ২২ ঘণ্টার কারফিউ। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে জেলাটিতে। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন মানুষ; তবে সে সংখ্যা খুবই সীমিত। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে বুধবার (১৬ জুলাই) দিনভর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাত থেকে চলছে কারফিউ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে সেখানে থমথমে পরিবেশ দেখা যায়। তবে কারফিউয়ের মধ্যেও সড়কে দেখা গেছে মানুষের উপস্থিতি। সংখ্যায় কম হলেও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া এসব মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছেন। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়কে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনও উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
আজ সকালে শহরের ঘোনাপাড়া, এলজিইডি মোড়, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, কোট চত্বর, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার ও পুলিশ লাইনস মোড় ঘুরে কোথাও কোনও চেকপোস্ট বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার সামনে কয়েকজন গ্রাম–পুলিশের সদস্য ও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। সেখানে মানুষের জটলা দেখা যায়। কাঁচাবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বেশকিছু ফলের দোকানে লোকজন ছিলেন। এদিকে, কারফিউয়ের কারণে স্থানীয়ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৬ জুলাই) রাত ৮টা থেকে কারফিউ শুরু হয়। সেটি বলবৎ থাকবে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গোপালগঞ্জে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এর আগে, বিকালে গোপালগঞ্জ থেকে মাদারীপুর যাওয়ার পথে হামলার শিকার হন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়েন তারা। পরে পরিস্থিতি নিয়স্ত্রণে ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্যও যোগ দেন।
হামলার মুখে এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পাশাপাশি তারা দেশবাসীকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে গোপালগঞ্জে রওনা দেয়ারও আহ্বান জানান। এরপর সেনাবাহিনীর সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন এনসিপি নেতারা।
ওই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। পরে রাত থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়।
জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে গতকাল বুধবার দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।