Home » প্রিয়জনরা দূরে, মানসিক চাপ বাড়ছে বয়োবৃদ্ধদের

প্রিয়জনরা দূরে, মানসিক চাপ বাড়ছে বয়োবৃদ্ধদের

অনলাইন ডেস্ক: দীপিকা রূদ্র। ষাটোর্ধ্ব এই নারী থাকেন মাগুরায়। তার দুই ছেলেমেয়ে চাকরির সুবাদে থাকেন ঢাকায়। গত ছয় মাসেও তিনি ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। প্রযুক্তির সহায়তায় ভিডিওকলে কথা বললেও মানসিকভাবে স্বস্তি পাচ্ছেন না এই নারী। প্রিয় নাতি বা নাতনিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবেন—এতেই তো শান্তি! কিন্তু করোনা ভাইরাস এই নারীকে তার প্রিয়জন থেকে দূরে রেখেছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে প্রিয়জনের শারীরিক সংস্পর্শের খুবই প্রয়োজন। কেননা স্পর্শ শরীরে বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রয়োজনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় ও মানসিক চাপমুক্তি ঘটায়। করোনার কারণে এখন অধিকাংশ মানুষ স্পর্শ থেকে দূরে থাকছেন। ঢাকায় থাকা ছেলেমেয়েরাও গ্রামে যাচ্ছেন না। অজানা শঙ্কায় তারা গ্রামের বৃদ্ধ বাবা-মাকে দূরে রাখছেন। ঢাকাফেরত ছেলেমেয়ে যদি করোনা ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে যান? বৃদ্ধ বাবা-মা যদি একবার আক্রান্ত হন তাহলে তো সবই শেষ!

গত রোজার ঈদে কিছু মানুষ করোনার বাধা ঠেলে গ্রামের বাড়ি গেলেও অধিকাংশ মানুষই স্বজন থেকে দূরে রয়েছেন। এবার কোরবানির ঈদও একইভাবে কাটতে যাচ্ছে। ফলে গ্রামের বাড়িতে থাকা বয়স্ক প্রিয়জন মানসিক চাপে দিন কাটাচ্ছেন। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রিয়জনের সান্নিধ্য অনেক সংকটের নিরসন করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘ইতিবাচক স্পর্শে মানুষের শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন নামের হরমোন নিঃসরণ বাড়ায় এবং করটিজল নিঃসরণ কমায়, যার ফলে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। যেমন অনুপ্রেরণা, সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা, মানসিক চাপমুক্তি ইত্যাদি। দীর্ঘদিন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে। শুধু বৃদ্ধ নয়, শিশুর সম্মিলিত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে।

এই চিকিৎসকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বয়স্করা সবচেয়ে বিপদাপন্ন এবং নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বয়স্করা এই পরিস্থিতিতে শিশুর মতো অবুঝ আচরণ করতে পারেন। শিশুরা খিটখিটে বা অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এই সময়ের নারীদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর রাখার ওপর জোর দেন ডা. নাসিমা। মানসিক চাপ দূর করতে বাগান করা এবং পোষা পশুপাখির আদর-যত্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। নিয়মিত ঘুম, খাবার গ্রহণ, শরীর চর্চা, ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, সুস্থ বিনোদন যেমন নাচ, গান, সিনেমা দেখা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতি বয়স্কদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সংকট তৈরি করছে। তাই ভার্চুয়ালি গ্রামে থাকা স্বজনদের সঙ্গে অনেক বেশি যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। যদি ভার্চুয়ালি যোগাযোগ না করা যায় তাহলে টেলিফোনেও কথা বলে তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতে হবে। শারীরিক বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ দিতে হবে। এমনভাবে কথা বলতে হবে, যে তিনি বুঝতেই পারবেন না তার ছেলে বা মেয়ে তার থেকে দূরে আছে। কারণ বয়স্কদের যদি মানসিক ক্ষত একবার তৈরি হয় তাহলে সেটা থেকে বের করা কিন্তু খুবই কষ্টসাধ্য কাজ।

গবেষকরা বলছেন, স্পর্শ থেকে একজন মানুষের আবেগ, ভালোবাসা, রাগ, কৃতজ্ঞতা এবং ঘৃণার অনুভূতি বোঝা যায়। আর নিয়মিত ইতিবাচক স্পর্শ একজন মানুষের আক্রমণাত্মক মনোভাব কমায় এবং সামাজিক আচরণ বাড়ায়। মোটের ওপর স্পর্শ সম্পর্ককে মজবুত করে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *