জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১৩৫ শিশুকে হত্যা করা হয়। যার সরাসরি নির্দেশদাতা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এভাবে শিশু হত্যা-নির্যাতন দেখে হতবাক গোটা বিশ্ব। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে হত্যার নির্মম চিত্র। নিষ্ঠুর ওইসব হত্যায় সরাসরি জড়িত ও নির্দেশদাতা অনেকেই গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বজনেরা। মামলার অগ্রগতি নিয়েও খুশি নন তারা।
জুলাই আন্দোলন দমনে নির্বিচার গুলি আর তাতে অসংখ্য তরুণ-তাজা প্রাণ ঝড়ে যাওয়ার ভিডিও দেখে অস্থির হয়ে উঠেছিল ৬ বছরের শিশু জাবির ইব্রাহিম। ৪ আগস্ট রাত সে বাবা-মাকে আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলছিল। ৫ আগস্ট সকালে মায়ের সঙ্গে লং মার্চে নামে ছোট্ট জাবির।
শহীদ জাবির হোসেনের বাবা কবির হোসেন বলেন, ‘৪ আগস্ট রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে ওকে আমি ধমক দিয়ে বলতেছিলাম- তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমাচ্ছ কেন? ও বলতেছিল, আমি কালকে আন্দোলনে যাব, আমাকে নিয়া যাবা।’
এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর খবর। রাজপথে যখন জনতার উল্লাস, ঠিক তখনই শেষ মুহূর্তের মরণ খেলায় মেতে উঠে অনুগত পুলিশের বন্দুকের নল। তাদের এলোপাতাড়ি গুলি এসে লাগে ৬ বছরের ছোট জাবিরের শরীরে। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
কবির হোসেন বলেন, ‘ওকে, বলতেছিলাম- তুমি দৌড়াও, গুলির শব্দ এখানেও শোনা যাচ্ছে। এই কথা বলেই একটু এগিয়ে গেলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনতে পেলাম আমার ছেলের আত্মচিৎকার।’
পরিবার থেকে মামলার পরও এখনও সব আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি শাহ আলম আটকের পরও কীভাবে পালালো সেটাই এখন বড় প্রশ্ন শহীদ জাবিরের বাবার।
কবির হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক মাস আগে পত্রিকাতে আমি পড়লাম, উনাকে (শাহ আলম) কুষ্টিয়া থেকে ধরে ধরে এনে কাস্টডিতে রাখবে নাকি কাস্টডির বাহিরে রেখেছিল আমি জানি না। পরে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন।’
রিয়া গোপ নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটির দীপক কুমার গোপ ও বিউটি ঘোষ দম্পতির একমাত্র সন্তান। ২৫ জুলাই দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল সে। সে সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর গুলিতে শহীদ হন ৬ বছরের ছোট রিয়া গোপ।
যুদ্ধ ক্ষেত্রেও শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা হয়। অথচ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ১৩৬ শিশু। নির্মম এই চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
জুলাই ফাউন্ডেশনের সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আকবর কামাল বলেন, ‘আহত শিশু হচ্ছে ২ হাজার ৪৩৪ জন। এটা আমাদের কাছে যে ভেরিফিকেশন ও গেজেটভুক্ত যেটা তালিকা সেই সংখ্যাটা।’
হত্যাযজ্ঞের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাসহ খুনিদের দ্রুত বিচারের তাগিদ শহীদ পরিবারগুলোর। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে থাকবে, এটা মানুষ ভুলবে না। আর এগুলো শিশু হত্যার বিচার তো আমরা করছি। মানুষ হত্যা, শিশু হত্যা, সবগুলোর বিচার হবে। বাংলাদেশে যত বছর লাগে বিচার হবে।’
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ জনকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।