Main Menu

বিষন্ন সূর্যের সান্নিধ্যে

অনেকদিন থেকে মনটা ভালো যাচ্ছে না। তার মাঝে ইদানিং শরীরটাও ভালো নেই। কিছুটা অস্থির অস্থির লাগছে।কলেজে যেতেও ইচ্ছে করে না। অফিসে গেলেও তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি। এদিকে আমি বাহিরে গেলে মা সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন থাকেন। টেনশনে থাকেন। ঘর সামলাতে গিয়ে মা হিমসিম খান। আগের মতো স্বতস্ফূর্তভাবে কাজ করতে পারেন না। মা মাকে হাতে ধরে সংসারের সকল কাজ শিখিয়েছেন। বাবা সংসারে ভারবাহীর মতো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

একমাত্র বাবারাই কোন সংসারে আজীবন ক্লান্তিহীন কাজ করে যান। ভাবলে খুব কষ্ট হয়। আমার চাকরীর সুবিধার্তে নিজের খরচটা চালাতে পারি। ভাবছি শরীর ভালো হলে খুব সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করবো। যাতে সরকারী কোন চাকুরীতে জয়েন করতে পারি। অবশ্য পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে যে দুই একটা ইন্টাভিউ দিয়েছি তাতে চাকরী হয় নি। না হওয়ারই কথা। কারণ ভালো প্রস্তুতি ছিল না। এদিকে বেসরকারি চাকুরীর কোন ভিত্তি নেই। যখন তখন চাকরী চলে যাওয়ার একটা সম্ভবনা থেকে যায়।  

কিছুদিন হলো ফেইসবুকে একজন লেখকের সাথে পরিচয় হয়েছে। খুব বেশিই লেখালেখি করেন তিনি। তবে আড়ালে থেকে। নিজেকে কখনো হাইলাইট করার মানসিকতা উনারমাঝে নেই। মানুষটা বুদ্ধিমান কিন্তু চালাক নন। উনার সাথে কথা বললে- চারপাশে কেমন যেন মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক্ষণ কথার রেশ মস্তিষ্কে থেকে যায়। এই তো সেদিন, অফিস থেকে যাওয়ার পর হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। লেখককে ম্যাসেঞ্জারে নক করলাম। অবশ্য উনাকে আমি সূর্য বলে ডাকি। এটা আমার দেয়া নাম। উনার মূল নামের সমার্থক শব্দ। উনি আমাকে সুস্মিতা নামে ডাকেন। অবশ্য এর একটা কারণ আছে। সেটা হলো- আমার সুন্দরী হাসি। আমি হাসলে নাকি – প্রেমিকের নিষ্পাপ চোখের মতো অবশ হয়ে যায়সমুদ্র সৈকত। আর চুলের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন-পৃথিবী সমস্ত হাওয়া থমকে দাঁড়ায় আমার অবাদ্ধ চুলের ঝাপটায়। আমি সাজসজ্জা করলে নাকি পরিবেশটা বৈশাখের সোনালী ধানের মতো হেলান দিয়ে দাঁড়ায় আমার দিকে আমার চোখের দৃষ্টিতে নাকি দুষ্টুমী আর অভিমান আছে। অবশ্য মন্দ বলেন নি। সুযোগ পেলে দুষ্টুমিতে ছাড় দেই না। আর এভাবেই দুষ্টুমি করতে করতে প্রায়ই সূর্যকে আমি জ্বালাতন করি। কিন্তু কখনো দেখিনি উনাকে রাগ করতে। কেমন যেন শান্ত, গম্ভীর, সচেতনভাবে কথা বলেন। আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো শ্রবণ করি। সে দিন কথার প্রসঙ্গে বলেছিলেন- ভালোবাসায় বিশ্বাস আর অধিকার না থাকলে নাকি আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। কথাটি শোনার পর কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আসলেই তো……. সম্পর্কে বিশ্বাস আর অধিকার তো সবকিছুই। আমি কি সত্যি সত্যিই লেখকের প্রতি অধিকার খাটাতে যাচ্ছি? হয়তো যাচ্ছি। হয়তো না। যাক গে….. অধিকার খাটালেই বা কি? উনি তো আর বিরক্ত হচ্ছেন না।

পৃথিবীর এই সংকটকালে হোম কোয়ারেন্টাইনে সবটুকু সময় কাটাতে হচ্ছে। সে দিক থেকে কিছুটা বোরিং ও লাগছে। সেজন্য সূর্যকে প্রায়ই ম্যাসেঞ্জারে নক করি। তিনি সবসময়ই লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারপরও নি:সংকোচে আমাকে রেসপন্স করেন। খুবই শান্তভাবে কথা বলেন। মাঝে মাঝে কবিতার দুই একটা লাইনও শোনান। অর্থ না বুঝলে তাৎপর্যও বুঝিয়ে দেন। আসলে উনার লেখার গভীরতা অনেক। আমি প্রায়ই উনার সাথে কথা বলতে চাই কিন্তু কী এক সংকোচে কথা বলতে পারি না। সেটা কী ইগো প্রবলেম?বুঝিনা। নাকি উনাকে আমি মিস করি। হয়তো মিস করি। নয়তো না…… তবে উনার প্রতি আমার এক অস্বাভাবিক ভালো লাগা কাজ করে। সে দিন একটি কবিতার লাইন শুনিয়েছিলন। “এমন সন্ধ্যা নামার বেলায়/তুমি আসবে কি আমার বুকের বারান্দায়? ভীষণ তেষ্ঠা পেলে কখন/জল হাতে দাঁড়াবে কি তখন”? লাইন দু’টো শোনার পর আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। সে জন্য ফোনটি কেটে দেই-সেদিন সারা রাত আমার ঘুম হয়নি। লেখক আমাকে কী বুঝতে চাইছেন? নাকী শুধুই কবিতা। আমার ভেতরটা কেমন যেন মূর্ছা যাচ্ছিলো। এক অদ্ভুত অশান্তি কাজ করছিলো। যা হোক ঘুম থেকে উঠে স্নান শেষ করে ঠাকুর ঘরে গেলাম। প্রার্থনা শেষে মন স্থির হলো। তারপর নিজের পড়াশোনা শুরু করলাম। ইন্টারভিউ জগতে আমি একটু কাঁচা। সেদিন থেকে আমি প্রায়ই সূর্যের সহায়তা নেই। ঐদিন আর উনাকে নক করিনি। তিনিও না। তবে কেন যেন উনার কলের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে নক করেন নি। আসলে লেখকদের ভাবনা সহজে বোঝা যায় না।

ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়া ও ছবি তোলার প্রতি ভীষণ লোভ কাজ করতো। সে হিসেবে শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্রাপাধ্যায়, রবীন্দ্রসমগ্রসহ অনেক বই পড়েছি। যেকোন নতুন জায়গায় গেলে ছবি তোলা মিস করি না। ইদানিং কেন যেন উপন্যাস বিষয়ে সূর্যের সাথে গল্প করতে খুব ইচ্ছে করে। মোবাইলে ছবি তুললে উনার ফোনে পাঠাতে ইচ্ছে করে। নাকী আমি উনার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি? তবে উনার গাম্ভীর্যতা আমাকে খুব অভিভূত করে। গত সপ্তাহে অফিসে কাজ করার সময় উনার সাথে কথা বলছিলাম। তখন বাহিরেপ্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তিনি খুব সাবলিলভাবে কবিতার ভাষায় বললেন-“ তোমার জন্য বুকের ভেতর, এক পৃথিবী বৃষ্টির ঢেউ/ খুব যতনে আগলে রাখি, টের পায় না অন্য কেউ। বৃষ্টি এলে বুকের ভেতর কত শত অসুখ হয়, একটুখানি দূরে থাকলেকেমন যেন লাগে ভয়”। লাইনগুলো শুনে আমি কেমন যেন ফুরিয়ে যাচ্ছিলাম। যেমনটি ফুরিয়ে যায়-  চায়ের চিনি। চিনি কাপে ডুবালে কাপের তলায় যাওয়ার আগেই সেটা ফুরিয়ে যায়।  সেদিনও আমি আর কোন কথা বলিনি।

বাসায় গিয়েই সিরিয়াস মুডে পড়তে বসলাম। আবার লেখক চলে আসলেন চোখের দর্পনে, বইয়ের পাতায়। কি অসহ্য! কাউকে ভালো লাগলে এমনটি হয় কেন? লেখককেম্যাসেঞ্জারে নক করলাম। কারণ ছাড়াই। বাহানা করে। বললাম ইন্টারভিউয়ের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিতে। উনারকথা ও সুপরামর্শ শুনে রীতিমত অবাক হলাম। কনসালটেশন অনুযায়ী পড়া শুরু করলাম। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইদানিং কিছুটা ইমপ্রোভও হয়েছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে উনার কনট্রিভিউশনও কম নয়। তারপরও আমার লেখাপড়ার এক্টিভিটিসে লেখক ন্তুষ্ট নন। তিনি চান আরো স্বতস্ফূর্তভাবে পড়া চালিয়ে যেতে। যাতে আমার ভালো একটা চাকরী হয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাজ করতে পারি। পরিবার ও আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি। নিজে স্বাবলম্বী হতে পারি। লেখকের প্রত্যাশা, নিবিড় মনিটরিং ও আন্তরিক কেয়ারিং আমাকে দিন দিন বদলে দিচ্ছে। আমি সকল ক্ষেত্রেই সামনে এগোচ্ছি। আর কেমন যেন উনার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। আসলে উনাকে ভালোবেসে ফেলছি কিনা বুঝতে পারছি না। ভালোবাসায় খুন হয়ে গেলে- রক্ত লাগে না কারো হাতে।  

কিছুদিন আগে লেখকের ফুল প্রোফাইল চেক করলাম। প্রোফাইল ঘাটাঘাটি শেষে যা বুঝলাম-হয়তো লেখকের স্নিগ্ধ সকালের মতো কোন চমৎকার অতীত ছিল। যাকে ভালোবেসে তার হাতে তুলে দিয়েছেন জীবনের সবটুকু সত্য। পাওয়া না পাওয়ার ভেলায় দাঁড়িয়ে লেখকের লেখালেখিই এখন হয়তো সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী। কেন বন্ধন ছিন্ন হবার যন্ত্রণায় হৃদয় থেকে রক্ত ঝরে অঝোর ধারায়। কেন প্রতিটা মানুষের হৃদয়ে একেকটি ভালোবাসার তাজমহল গড়ে উঠে না। কেন ভালোবাসলে মানুষ তার সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে পায় না। কেন মানুষের রঙিন জীবন হয় সাদাকালো। কেন সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত মানুষকে অভিভূত করেনা। প্রশ্নগুলো বারবার আমার মস্তিষ্কে ঘোরপাক খায়। অবশ্য কথার প্রসঙ্গে একদিন তিনি বলেছিলেন-“কাউকে ভালোবাসলে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসলে কার্পণ্য করতে নেই। ভালোবাসলে নিজের হৃদয়টা এফোঁড় ওফোঁড় না হলে নাকিভালোবাসায় তৃপ্তি নেই। ভালোবাসা হচ্ছে একটা গোলক ধাঁধার মতো। নিশানা ঠিক রেখে হুলূস্থুল ডুকে যাবে- বুক বেঁধ করে একদম হৃদয়ের গভীরে। যাকে ভালোবাসবে সে নাকি হবেনিজের শ্বাসকষ্টের ইনহেলার, বেঁচে থাকার অক্সিজেন। তার হাত ধরলে হৃদয় প্রসারিত হবে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হবে। ভালোবাসা মানুষকে মহান করে, হৃদয়কে করে আকাশের মতো সুবিশাল”।

আমি কেন এসব ভাবছি? আমার কেন এমন লাগছে। ঈর্ষা লাগছে কেন? লেখককে নিজের করে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। বোধয় আমার প্রেম হয়েছে, মাথার ভেতর বইছে ঝড়। হৃদয়জুড়ে দমকা হওয়া, বাড়ছে কেবল ঘুর্ণিঝড় প্রিয় সূর্য কি আমাকে গ্রহণ করবে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে? নাকি ফিরিয়ে দিবে? লাস্ট- গত রাতে আমাকে যে কবিতাটি শুনিয়েছিলেন লেখক, সেটা এমন ছিলো-

একদিন হৃদয়ের সব জঞ্জাল- ধুয়ে দেয় যদি বৃষ্টি।

মনের যত মৌন কথা- বুঝে নেয় যদি তোমার দৃষ্টি।

আমি তবু আর-হবো না অন্য কার/সঁপে দিবো সব- যা কিছু একাকী আঘাত।

পেয়েও যদি আমায়, হারাও আবার/যখন মন খারাপ হবে-কার বুকে ফিরবে আবার?

কবিতার লাইনগুলো দিয়ে লেখক কী বুঝাতে চান? নিশ্চয় ভালোবাসেন আমাকে। হয়তো বাসেন। নয়তো না।  সূর্য কী উনার বিষণ্ন অতীত ভুলে যাবেন? নতুন করে ভালোবাসবেন আমায়? রাখবেন কী উনার সান্নিধ্যে আমাকে? যদি না রাখেন তবুও আমার হৃদয় তার কাছেই চিরঋণী হয়ে থাকবে।

সূর্যের সান্নিধ্যে থাকতে ভীষণ ইচ্ছে হয় আমার।

ভীষণ।

–ভীষণ।

 

লিখক :

অরুন দাস

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.