Home » বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশ : এ এইচ এম ফিরেজ আলী

বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশ : এ এইচ এম ফিরেজ আলী

আজ ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর বা ৫ দশক পূর্ণ হলো।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল তার বয়স আজ অর্ধশত বছর।সে দিন রাত থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ যারা করেছেন এবং যারা দেখেছেন তারা ক্রমেই ইহকাল ত্যাগ করছেন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শিশু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী ও পূর্ণ হলো। এটা হলো বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর জীবনের সেতু বন্ধনের দিন।

মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাস লেখা থাকলে ও অঞ্চল, গ্রাম এবং এলাকা ভিত্তিক সঠিক ইতিহাস এখন ও লেখা ও সংরক্ষণ করা হয়নি।মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের তালিকা তৈরি ও প্রকাশ করা হয়নি।মামা সৈয়দ আব্দুল খালিক সুলেমান ছিলেন একজন পাকিস্তান সেনা বাহিনীর সদস্য। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে বড় ভাই আব্দুল খালিক চাচাত ভাই আপ্তাব আলী সহ এলাকার যুবকদের নিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।আমি সর্বকনিষ্ঠ যুবক যুদ্ধ যাওয়ার জন্য তাদের পিছনে পিছনে দৌড়ে ছিলাম।ছোট থাকায় সবাই আমাকে তাড়িয়ে দেন।বরং কয়েকটি চড় থাপ্পড় ও খেয়েছিলাম।কম বেশি মুক্তিযুদ্ধ ও দেখেছি।বাঁশ ঝাড়ের নীচে গর্তে ও থেকেছি।যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে আজীবন ঘৃনা করে আসছি।মহান এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা সহ স্বাধীনতার পক্ষের সবাইকে স্যালেউট জানাই।শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই সকল শহীদদের।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন একটি দিন যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।এদিন ঘুমন্ত বাঙালীকে অপারেশন সার্চলাইট নামে নির্বিচারে হত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তান বর্বরবাহিনী।এদিনটিকে আমরা আজ জাতীয় গনহত্যা দিবস হিসাবে পালন করছি।জেনারেল টিক্কা খাঁন বলেছিল, ‘ আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই মানুষ চাই না।বিভীসিকাময় ভয়াল পচিঁশে মার্চ কালো রাত প্রসঙ্গে মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন লিখেছেন, পচিঁশ মার্চ রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা এবং তিন হাজারকে গ্রেফতার করা হয়।পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে পাকসেনারা ঘর বাড়ি পুড়ানো দোকান পাঠ লুট ও ধ্বংসের নেশায় পরিনিত করে।মানুষের মৃত দেহ কাক ও শেয়ালের খাবারে পরিনিত হলো।সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে ছিল শ্মশানভূমি। ৭১ সালের পহেলা মার্চ থেকে পচিঁশ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখের বেশী মানুষের জীবন নাশ করা হয়েছিল।এর আগে সাত মার্চ তার বাঙালীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।২৫ শে মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে এটাই আমার শেষ বার্তা বলে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন।৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়।২৫ শে মার্চ রাত থেকে ৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন।বঙ্গবন্ধুর রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ,এম মনসুর আলী,কামরুজ্জামান প্রবাসী মুজিবনগর সরকার গঠন করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
২৫শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পৃথিবীর জঘন্য তম বর্বরোচিত হামলার ঘটনার স্মরনে দুইহাজার সতের সালের এগার মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে ২৫ শে মার্চ কে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষনা দেয়া হয়।২৫ শে মার্চ সকালে ঢাকা রমনা প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া,ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করে বাঙালি হত্যার নির্দেশ দিয়ে কোন রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ইয়াহিয়া খাঁন গোপনে ঢাকা বিমান বন্দর হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।এখবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে রাত নয়টায় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।বঙ্গবন্ধু সকলকে শেষ নির্দেশ দিয়ে বিদায় করে দেন।

বঙ্গবন্ধু বাঙালির হাজার বছরের বৈষম্য, বঞ্চনা,অত্যাচার নির্যাতন, এবং শোষনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন।দেশ স্বাধীন করে।বাঙালির মুক্তির জন্য সেই কিশোর বয়স থেকে নিজের জীবনের সুখ – দুঃখের কথা কখনো চিন্তা করেননি।গবেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিলো বলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্হায় জেল খেটেছেন,নষ্ট করেছেন নিজের শিক্ষাজীবন।শুধু মাত্র খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার ও দাবী আদায়ের সংগ্রামে জীবন কেটেছে।স্কুল জীবনের ৭ দিনসহ বাঙালির মুক্তির জন্য ৪ হাজার৬৮২ দিন জেল খেটেছেন। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতেন।পাকিস্তানের কারাগার থেকে নিজের জন্য কবর খোঁড়া ও দেখেছেন।তাই তো তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা,জাতির পিতা,বাংলাদেশের স্তপতি, বাঙালির স্বপ্নদ্রষ্টা, যেখানে বাংলাদেশ সেখানে বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলাদেশ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *