Home » বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে ‘শতাধিক পরিবার’ গৃহহারা

বালাগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে ‘শতাধিক পরিবার’ গৃহহারা

মো. জিল্লুর রহমান জিলু : বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে স্থানীয় সাদেকপুর গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার গৃহহারা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা এবং মধ্যরাতে সংঘটিত এ ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব পরিবারের নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ অর্ধশতাধিক লোকজন মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে কমপক্ষে আরও ২৫/৩০টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বা নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আশপাশ এলাকার ঘর-বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম পুতুলসহ ক্ষয়ক্ষতির শিকার পরিবারের লোকজন যেকোন সময় আরও ভূমিধ্বস ও ভাঙ্গনের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ এবং জরুরী সহায়তা প্রদানের জন্য তারা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হক গতকাল বুধবার দুপুরে নদীভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বসতিহারা ক্ষয়ক্ষতির শিকার পরিবারসমুহের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ বিতরণ করেন।

বিকালে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসেফ আয়নান বখশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আলাপকালে তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন যাবত কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী সাদেকপুর গ্রামে নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা বিরাজ করছিল। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে পরিস্থিতি বিপদজনক আকার ধারণ করে। সর্বশেষ সন্ধ্যা এবং মধ্যরাতে কয়েক দফায় এসব বাড়ির বসতভিটা নদীতে ধ্বসে পড়ে। গ্রামের মনোরঞ্জন সূত্রধর, রণজিত সূত্রধর, নিপেন্দ্র সূত্রধর, কল্পনা সূত্রধর, চরিত্র সূত্রধর, মজনু মিয়া, সালেহ আহমদ, আইয়ুব আলী, লিয়াকত আলী এবং আনোয়ারা বেগমদের এই ১০টি পরিবার গৃহহারা বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতভিটার পাশাপাশি প্রচুরসংখ্যক গাছগাছালি এমনকি মুসলিম কবরস্থান পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা আসেফ আয়নান বখশ জানিয়েছেন কমপক্ষে সাড়ে ৪শ মিটার এলাকা ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম পুতুলসহ এলাকাবাসী জানিয়েছেন, স্থানীয় সুশেন্দ্র সূত্রধর, রশেন্দ্র সূত্রধর, মণিন্দ্র সূত্রধর, অমর সূত্রধর, বাদল সূত্রধর, রিপন সূত্রধর, অর্চনা সূত্রধর, মণি সূত্রধর, মিণ্টু সূত্রধর, সণ্টু সূত্রধর, ফণি সূত্রধর, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুবিনয় সূত্রধর, বেণী সূত্রধর, ললি সূত্রধর, এলাইছ মিয়া, চেরাগ আলী, চমক আলী, মিনার মিয়া, আকতার আলী, জহির আলীসহ কমপক্ষে ২৫/৩০টি পরিবার নদীভাঙ্গনের হুমকীর মধ্যে রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী জানিয়েছেন, পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর, কায়েস্থঘাট, হাঁড়িয়ার গাঁও, বিনোদপুর, আমজুর প্রভৃতি গ্রামে প্রায় প্রতি বছর দফায় দফায় নদীভাঙ্গনের শিকার হয়ে ‘শতাধিক পরিবার’ ইতোমধ্যে গৃহহারা হয়ে পড়েছে। অসহায় এসব পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আলাপকালে সাদেকপুর গ্রামের গৃহহারা পরিবারের সদস্য চরিত্র সূত্রধর (৮৫), জাহানারা বেগম (৪৫), সালেহ আহমদ (৫৫), রণজিত সূত্রধর (৭৫) বলেন, নদীভাঙ্গনের কবলে আমাদের প্রতিবেশীদের অসংখ্য বসতভিটা, গাছগাছালি বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি মুসলিম কবরস্থান, দেবতাঘরও ভূমিধ্বসের শিকার হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আরও ভাঙ্গন ও ভূমিধ্বসের আশঙ্কা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জরুরী সহায়তা প্রদান ও নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ দিকে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হক নদীভাঙ্গন কবলিত সাদেকপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি উদ্ধার তৎপরতা প্রত্যক্ষ করেন ও বসতিহারাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ ২হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম পুতুল, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল আহমদ, সাংবাদিক মো. জিল্লুর রহমান জিলুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া বিকালে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আসেফ আয়নান বখশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আলাপকালে তিনি জানান, মারাত্মক নদীভাঙ্গন প্রতিরোধের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে আলাপকালে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. আবদাল মিয়া নদীভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এসব অসহায় পরিবারকে সহায়তার ব্যাপারে পরিষদের সকলের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *