Home » বাসে পেট্রোল বোমা-৯ বছরেও মেলেনি বিচার

বাসে পেট্রোল বোমা-৯ বছরেও মেলেনি বিচার

গাইবান্ধায় চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ৯ বছর। আজকের এই দিনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমার আগুনে শিশুসহ বাসের আটজন যাত্রী মারা যান। দগ্ধ হন অন্তত ৩৫ জন। চাঞ্চল্যকরর এ ঘটনার নয় বছরে আদালতে মাত্র পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আসামি মৃত ও দীর্ঘদিন আদালতের বিচারক না থাকায় বিচারিক কার্যক্রমে ধীরগতি বলে জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের প্রত্যাশা দ্রুতই এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে। এদিকে দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল।মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা হরতাল- অবরোধ চলছিল। ওই সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা পাঁচপীর থেকে ৫০-৫৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে নাপু এন্টারপ্রাইজের একটি নৈশকোচ পুলিশ পাহারায় রাত ১০টার দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাটের বুড়িরঘর এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছোড়ে। এতে শিশুসহ বাসের ছয়জন যাত্রী দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই জনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন— সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামের জিলহজ আলী (৩৫), মালিবাড়ি ইউনিয়নের আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩০), সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সীচা গ্রামের সাইব মিয়ার মেয়ে হালিমা বেগম (৪২), দক্ষিণ কালীর খামার গ্রামের খয়বর হোসেন দুলুর ছেলে সৈয়দ আলী (৪২), চন্ডিপুর গ্রামের বলরাম দাসের মেয়ে শিল্পী রানী দাস (১০), একই গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২২), তারা মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (১০) ও তার স্ত্রী সোনাভান বিবি (৪৫)।

এছাড়া এ ঘটনায় ওইদিন শিশুসহ অন্তত ৩৫ জন যাত্রী দগ্ধ হন। ক্ষতিগ্রস্ত হন আশেপাশের লোকজন।

এ ঘটনার পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সদর থানার এসআই মাহাবুবুর রহমান বাদী হয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিবের ৬০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ২৮ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ ৭৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়।

চার্জ গঠনের কিছুদিন পর অভিযুক্ত গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারি মোস্তফা মনজিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও পাঁচ আসামির মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার ৯ বছর পার হলেও অনেকেই সেই ভয়াবহ স্মৃতি, বর্বরোচিত ঘটনায় স্বজনদের হারানোর বেদনা আজও ভুলতে পারেনি। পেট্রোল বোমা হামলায় আহতরা শরীরে ক্ষত চিহ্ন ও স্বজনদের স্মৃতি বুকে ধরে বেঁচে আছেন। সরকারি যত সামান্য সহায়তা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ রাখেনি। দীর্ঘদিনেও বিচার না হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মাঝে হতাশা-ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

গাইবান্ধার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অতিরিক্ত (পিপি) মহাবুবুল আলম সেলিম, এ মামলার আসামি মৃত্যুজনিত কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বিলম্ব হয়েছে। এ ছাড়া বিচারক না থাকায় মামলা দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। ১০১ জনের সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলার সব আসামি উচ্চ আদালতে জামিনে আছেন।

এদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাবেক গাইবান্ধা জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেন, সেদিনের হামলার শিকার যাত্রীদের অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর আর শ্রমজীবী। তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাজের সন্ধানে যাচ্ছিলেন। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার ৯ বছরে মাত্র পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে চললে সাধারণ মানুষ বিচারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *