Home » আগামীকাল পবিত্র লাইলাতুল কদর

আগামীকাল পবিত্র লাইলাতুল কদর

আগামীকাল রবিবার রাতে সারাদেশে পালিত হবে পবিত্র লাইলাতুল কদর। নিম্নে মর্যাদাপূর্ণ রাত পবিত্র শবেই কদর সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে- লাইলাতুল কদর এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হলো—ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। রমজানের শেষ ১০ দিনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। এরমধ্যে কদরের রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। মানবজাতির সম্মানে এ রাতে আকাশের ফেরেশতারা ভূপৃষ্ঠে নেমে আসেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে কদরের রাত অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ২০১৭, মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৯)

কোরআন অবতীর্ণের রাত: আল্লাহ তাআলা এ রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ রাতে পবিত্র কোরআন লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ হয়। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর আপনি কি জানেন কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতার রুহ [জিবরাইল (আ.)] অবতীর্ণ হন, প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ : লাইলাতুল কদরের আকেটি মর্যাদা হলো এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চই আমি তা (পবিত্র কোরআন) মহিমান্বিত রাতে অবতীর্ণ করেছি, আমি তো সতর্ককারী। এ রাতেই প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)।

হাজার মাসের চেয়ে উত্তম যে রাত: লাইলাতুল কদর একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত। মহান আল্লাহ এ রাতে মুসলিম উম্মাহর জন্য অগাধ কল্যাণ রেখেছেন। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আপনি কি জানেন কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। (সুরা : কদর, আয়াত : ৩)

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় নামাজ পড়ে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি, হাদিস নং : ২০১৪)

কদরের রাতে পঠিত দোয়া: মহান আল্লাহর কাছে কদরের রাতে দোয়া করা জরুরি। হাদিসে রাসুল (সা.) ওই রাতের পঠিত দোয়া শিখিয়ে দেন। লাইলাতুল কদরের আমল সম্পর্কে আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পেয়ে থাকি তাহলে সে রাতে কী দোয়া করব? জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাঅফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস ৩৫১৩)

আয়েশা (রা.) বলেছেন, রমজানের শেষ দশ দিন শুরু হলে রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন। রাত জাগতেন এবং নিজের পরিবার-পরিজনকেও জাগাতেন। (বুখারি, হাদিস নং : ২০২৪)

বেজোড় রাতে কদর রাতের অনুসন্ধান: রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। রাসুল (সা.)-কে মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তা ভুলে যান। তবে রাসুল (সা.) সবাইকে শেষ ১০ দিনে কদরের রাত অনুসন্ধান করতে বলেছেন। এবং এ রাতের কিছু বৈশিষ্ট বর্ণনা করেছেন।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আমি ১০ দিন ইতিকাফ করি। আমার মনে হলো, আরো ১০ দিন ইতিকাফ করব। অতএব যারা আমার সঙ্গে ইতিকাফ করেছে তাঁরা যেন পুনরায় ইতিকাফ করে। আমাকে (কদরের) রাত দেখানো হয়েছে। তা ভুলে যাই। তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে তা অনুসন্ধান করো। আমি এ রাতে কাঁদা-মাটিতে সেজদা করি। এ রাতে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। রমজানের ২১ তম দিনে রাসুল (সা.) অবস্থান করেন। আমি নিজ চোখে তাঁকে দেখি। সকালবেলা তাঁর চেহারায় কাঁদামাটিতে ভরা দেখতে পাই। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ২১০৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *