Main Menu

হার মানিতে শিখুন

ভারতীয় জনতা পার্টি ৩৮ শতাংশ ভোট এবং সিকিভাগ আসন লইয়া বিধানসভায় একমাত্র বিরোধী দল হিসাবে উঠিয়া আসিয়াছে, কিন্তু তাহাতে নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁহার পারিষদবর্গের মন উঠে নাই। তাঁহারা ‘বঙ্গাল’ দখল করিতে চাহিয়াছিলেন, প্রলম্বিত নির্বাচনপর্বে তাঁহাদের রথী-মহারথীরা রাজ্য জুড়িয়া দাপাইয়া বেড়াইয়াছিলেন। তবু, শেষ অবধি শ্রীকাক্কেশ্বর ঘাড় নাড়িয়া রায় দিয়াছে: হয়নি, হয়নি, ফেল্। একই সঙ্গে তাঁহারা ব্যর্থ হইয়াছেন দক্ষিণ ভারতের পরীক্ষাতেও। তামিলনাড়ুতে প্রতিপক্ষ ডিএমকে ও তাহার শরিকরা সরকার গড়িতেছে। কেরলে বিজেপির আসনসংখ্যা শূন্য। এবং ইহাতেও দুঃখের অমানিশা ঘুচে নাই, দুঃসংবাদ আসিয়াছে খাস উত্তরপ্রদেশ হইতে। নামে দলহীন, সুতরাং কাজে দলসর্বস্ব পঞ্চায়েত নির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে বিজেপির সামগ্রিক স্থান দুই নম্বরে, সমাজবাদী পার্টির অনেকখানি পিছনে। এহ বাহ্য। দুই প্রধান ঘাঁটি অযোধ্যা এবং বারাণসীতেই বিজেপি পপাত চ মমার চ। সব মিলাইয়া গত এক সপ্তাহের জনাদেশে দলের ‘ফলশ্রুতি’: হাতে রহিল অসম।

আজ যে রাজা কাল সে ফকির— ভারতের সাত দশকের ইতিহাসে এই উত্থানপতন বহু বার ঘটিয়াছে। বস্তুত, বিশ্ব জুড়িয়া ইহাই ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান শক্তি বলিয়া স্বীকৃত ও বন্দিত। বিজেপি গত সাত বৎসরে অনেক নির্বাচনে জিতিয়াছে, অনেক নির্বাচনে হারিয়াছে, আরও অনেক নির্বাচন হইবে, খেলা চলিবে— হারজিত না থাকিলে খেলা কিসের? কিন্তু গোল বাধিয়াছে ঠিক এইখানেই। নরেন্দ্র মোদীরা সব সময় সব খেলাই জিতিতে চাহেন, জিতিতে না পারিলে বরং খেলাটি ভন্ডুল করিয়া দিবেন, তবু হার মানিবেন না। পশ্চিমবঙ্গে তাঁহারা নিঃসংশয় ভাবে পরাজিত, প্রধানমন্ত্রী-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাইয়াছেন, যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তায় সেই ভদ্রতাও স্থান পায় নাই। কিন্তু পরমুহূর্ত হইতেই দলের নেতানেত্রীরা সন্ত্রাসের অভিযোগে শোরগোল তুলিয়া জনাদেশকে কার্যত বানচাল করিতে ব্যগ্র ও ব্যস্ত হইয়া পড়িয়াছেন।

রাজ্যে নির্বাচন-উত্তর অশান্তি ও সন্ত্রাস অবশ্যই কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। শপথ লইয়াই মুখ্যমন্ত্রী তাহার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন। আশা, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করিবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী শপথ লইবার পূর্বেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়ানক অবনতির অভিযোগে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি জানাইয়া আদালতের দ্বারস্থ হইতেছে নূতন বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল— এই আচরণ শুধু বিচিত্র নহে, বিপজ্জনক! উপরন্তু, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পিছনে বিজেপির ভূমিকাও কি অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট নহে? অশান্তির পিছনে বিবিধ চক্রান্তের ভূমিকাও সর্বজনবিদিত। তাহা কেবল স্থানীয় স্তরে এবং ‘আইটি সেল’-এর বৃত্তে সীমিত নহে, দলের রকমারি নেতা, মুখপাত্র ও ভক্তরা সমাজমাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসন জারির সপক্ষে প্রচার চালাইতেছেন, এমনকি মিথ্যা ও বিপজ্জনক প্ররোচনার আশ্রয় লইতেছেন! এই প্রতিক্রিয়াগুলিতে প্রকট হইয়া উঠে গণতন্ত্রের প্রতি, গণতান্ত্রিক আদর্শ ও আচরণবিধির প্রতি চূড়ান্ত অশ্রদ্ধা। ‘সন্ত্রাসের প্রতিবাদে’ রাজ্য বিজেপির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করিবার সিদ্ধান্তও সেই অশ্রদ্ধারই প্রমাণ। আশঙ্কার বিলক্ষণ কারণ আছে, পরাজয়ের ‘মাসুল’ তুলিতে গোলযোগ সৃষ্টির নানা চেষ্টা চলিতেই থাকিবে। সেই উদ্যোগে সিবিআই, ইডি ইত্যাদি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে কাজে লাগাইবার পরিচিত প্রকরণ প্রয়োগের আশঙ্কাও প্রবল। যথার্থ তদন্ত অবশ্যই কাম্য, কিন্তু তদন্তের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করে। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন দেখাইয়াছে, গণতন্ত্রের শক্তি কতখানি। কিন্তু বর্তমান ভারতে সেই শক্তিকে রক্ষা করিবার কাজটি সহজ নহে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.