মানুষ কি আদৌ সৃষ্টির সেরা জীব – মো: তরিকুল ইসলাম আবির

ভূমিকাঃ পৃথিবীতে একমাত্র মানুষকেই বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরা কি সত্যিই এই উপাধির যোগ্য? অনেক বছর আগে যখন মানুষের আবির্ভাব ঘটে, তখন এই গ্রহটি ছিল এক ও অভিন্ন।
কিন্তু আজ—মানুষ কেন দেশ, জাত, ধর্ম, গোত্র নিয়ে বারবার সংঘাতে লিপ্ত? এই সংঘাত কি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ, নাকি অন্ধকারের সাক্ষ্য বহন করে?
সংঘাত ও বিকৃতি: মানুষ কাকে চিনছে?
মানুষ আজ মানুষকেই চিনতে পারছে না।
জায়গা-জমি, টাকা-পয়সার লোভে আপন ভাইয়ের উপর করছে নির্দয় অত্যাচার। বিক্রি হচ্ছে ন্যায়বিচার টাকার বিনিময়ে কেনা হচ্ছে আইনজীবী, বিকৃত হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া। ধর্মের নামে, রাষ্ট্রের নামে মানুষ মারছে মানুষকে।
দেশ-বিদেশে তৈরি হচ্ছে ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র—যার লক্ষ্য সুরক্ষা নয়, বরং নিজের ভাইকে ধ্বংস করা। পৃথিবী যেন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে এক অদৃশ্য মহা-বিপর্যয়ের দিকে।
সম্পর্কের অবক্ষয়: প্রযুক্তির মাঝে বন্দি মানুষ বদলে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে। যেখানে আগে মানুষ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে হাসত, খেলত, গান গাইত,
আজ সেই হাসি-গান গুম হয়ে গেছে মোবাইল স্ক্রিন আর ডিজিটাল পর্দার ভিতর। তরুণ প্রজন্ম বন্দি হয়ে পড়েছে প্রযুক্তির মাঝে যেখানে মানবিক সম্পর্ক আজ বিলুপ্ত প্রায়।
তাহলে কি মানুষ কেবলই অশান্তির জন্যই সৃষ্টি?
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেইনি?
স্মরণ করো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, জাপানের হিরোশিমায় ফেলা হয়েছিল পারমাণবিক বোমা “লিটল বয়”। প্রায় ১,৪০,০০০ মানুষ মুহূর্তে প্রাণ হারায়। এর তিন দিন পর, ৯ আগস্ট, নাগাসাকিতে ফেলা হয় “ফ্যাট ম্যান”—মৃত্যু হয় আরও ৭৪,০০০ মানুষের। এই ধ্বংসের ইতিহাস কি শেষ হয়েছে? না!
আজও চলছে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। নতুন নতুন বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করছে আরও ভয়ঙ্কর অস্ত্র—যার লক্ষ্য নিরাপত্তা নয়, শাসন কায়েম।
প্রকৃতি ও প্রাণী তাদের কাছে আমরা কতটা নিচে?
প্রশ্ন জাগে প্রকৃতি ও পশুরা কি আমাদের চেয়ে অধম?
সিংহ জঙ্গলের রাজা সে তার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই রাজত্ব করে, কখনো লোভে পড়ে অন্য অঞ্চলে আক্রমণ চালায় না।
কিন্তু মানুষ? লোভ, লালসা আর ক্ষমতার মায়ায় গ্রাস করছে প্রকৃতিকে। শতবর্ষী গাছ কেটে গড়ে তুলছে শিল্প-কারখানা ভাবছে না, সেই গাছের নিচে পাখির বাসা ছিল, পথিক পেয়েছিল ছায়া।
প্রকৃতির প্রতিশোধ: নিঃশব্দ ক্রন্দন আজ প্রকৃতিটা তার মুখ্য স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। প্রকৃতিটা কাঁদে নিঃশব্দে, নিঃস্বভাবে। বন উজাড় হলে হারায় শুধু গাছ নয়, হারায় হাজারো প্রাণ। পাখির গান থেমে যায়, বাঘের গর্জন নিস্তব্ধ হয়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিষ।
হিমবাহ গলে, সমুদ্রপৃষ্ঠ বাড়ে উপকূল অঞ্চল একে একে ডুবে যেতে থাকে। মানুষ তখনও অন্ধ সে শুধু মুনাফার পেছনে ছুটছে। ফ্যাক্টরির ধোঁয়া, প্লাস্টিকের স্রোত নষ্ট করে নদীর স্বচ্ছতা।
পানির মূল্য হয় সোনার থেকেও বেশি। ভূগর্ভস্থ পানি ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে, মানুষ উঠিয়ে নিচ্ছে শুধুই নিজের প্রয়োজনেই।
প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়—ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা হয়ে।
নতুন নতুন ভাইরাস এসে ছিন্নভিন্ন করে দেয় জীবনের ছন্দ।
বিষাক্ত ভবিষ্যতের দিকে আমরা রেখে যাচ্ছি এক বিষাক্ত ভবিষ্যৎ। যেখানে আমাদের সন্তানরা খুঁজবে বিশুদ্ধ বাতাস, খুঁজবে পানির এক ফোঁটা, খুঁজবে সবুজ পৃথিবী যেটি আমরা নষ্ট করে দিয়েছি আমাদের লোভের কাছে।
আজকের মানুষ, আজকের পানি, আজকের বিষ আগে মানুষ ফ্রিতে পান করত বিশুদ্ধ পানিনদী, ঝরনা, কূপ ছিল উন্মুক্ত। আর আজ? সেই পানির জন্যও হচ্ছে যুদ্ধ! দোকানে এক বোতল পানি ২০ টাকা,
আর পাঁচ তারকা হোটেলে সেটাই হয়ে যাচ্ছে ৫০০ টাকা! তাও মিলছে শুধু কিছু মিলিমিটার পানি। এখানেই শেষ নয় মানুষ আজ টাকা দিয়ে কিনছে বিষ!
ফরমালিন মিশ্রিত ফল, মাছ, দুধ আমাদের প্রতিদিনের খাবার হয়ে উঠেছে।
যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিচ্ছে।
ফরমালিন: এক নীরব ঘাতক!
ফরমালিন (Formalin) —ফরমালডিহাইডের (Formaldehyde) জলীয় দ্রবণ। যা সাধারণত মৃতদেহ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় আজ তা ঢুকেছে আমাদের খাবারে।
ফরমালিনযুক্ত খাবার খেলে কী হয়?
• পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি
• শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা
• লিভার ও কিডনির বিপর্যয়
• ক্যান্সারের ঝুঁকি
• স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি
• প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস
এ এক ধীর, বিষাক্ত, ব্যথাময় মৃত্যু—এক নীরব ঘাতক!
উপসংহার: আমরা কি সত্যিই শ্রেষ্ঠ?
মাঝে মাঝে মনে হয়—এই মানুষই কি সত্যিই প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি?
যেখানে পশুরাও সীমাবদ্ধতা মেনে চলে, সেখানে মানুষ নিজেই আজ হয়ে উঠেছে প্রকৃতির বোঝা। আমরা এমন এক সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে হয়তো একদিন পশু-পাখিদের কাছ থেকেও কর আদায় করা হবে। পানি পান করার জন্য, বন-জঙ্গলে বসবাসের জন্য!
কি দুঃখজনক!
কি বেদনাদায়ক—মানব সভ্যতার এই অগ্রগতি!
মানুষ—তুমি কি সত্যিই শ্রেষ্ঠ?
মানুষ—তুমি কি সত্যিই শ্রেষ্ঠ?
শ্রেষ্ঠত্বের আলোয় কি জ্বলছে তোমার দেহ।
কোন কারনেই বা তুমি হারিয়ে ফেলছো তোমার পথের মোহ। আজ তোমাকেই দেখে প্রকৃতি যেন বিমূর্তিত।
কত দেহ আজ রক্ত ঝরাচ্ছে আর শহর হচ্ছে বিস্ফোরিত। কত পশুপাখি আজ কাঁদছে ও কাপঁছে কারণ তারা বসবাসহীনরত। কিছু হলেই মানুষ আবেগী হয়ে কিছু না বোঝেই তা ভাইরাল করতে ব্যস্ত। তাইও বলি আমি মানুষ সত্যিই শ্রেষ্ঠ।
লেখক:
মো: তরিকুল ইসলাম আবির
শিক্ষার্থী, ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।

নির্বাহী সম্পাদক
Leave a comment
এই বিভাগের আরো সংবাদ

মানুষ কি আদৌ সৃষ্টির সেরা জীব – মো: তরিকুল ইসলাম আবির
ভূমিকাঃ পৃথিবীতে একমাত্র মানুষকেই বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরা কি সত্যিই এই উপাধিরবিস্তারিত

কী করছে না এই জেন–জি, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে
কী করছে না এই জেন–জি। ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী তরুণ জেন-জিদের প্রশংসায় সবাই এখনবিস্তারিত
Comments are Closed