Home » ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ, বাড়ছে-কমছে যেসব পণ্যের দাম

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ, বাড়ছে-কমছে যেসব পণ্যের দাম

জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল সোয়া ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন বক্তব্য শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট পেশ বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রথম নিজে উপস্থাপন করেন। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়।
এর আগে, দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ এক বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর আগামী অর্থবছরের এই বাজেটে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্বাক্ষর করেন।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপিতে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রেকর্ড জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদান বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে চার হাজার ১৩ কোটি টাকা। সবমিলে সরকারের আয় হবে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে ::
নতুন অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কারণে সব ধরনের বিড়ি ও সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়তে পারে। একই কারণে বাড়তে পারে মোবাইলে কথা বলার খরচও।

সিরামিকের সিল্ক বেসিনের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এ পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে দাম বাড়তে পারে মধুর। মধুর বাল্কের ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কার ও জিপ রেজিস্ট্রেশনসহ বিআরটিএ প্রদত্ত অন্যান্য সার্ভিস ফির ওপর সম্পূর্ক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে গাড়ির খরচ বাড়বে।

আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগে ছিল পাঁচ শতাংশ। ফলে আসবাবপত্র কেনার ক্ষেত্রে খরচ বাড়বে।প্রসাধনী সামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রসাধনী সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে।

খরচ বাড়বে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ, চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টারে ভ্রমণের ক্ষেত্রে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চের টিকিটের ওপর ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৫ শতাংশ। চার্টার্ড বিমান ও হেলিকপ্টারের ভাড়ার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া অনলাইন খাবার, অনলাইন কেনাকাটা, রঙ, বিদেশি টিভি, সোডিয়াম সালফেট, আয়রন স্টিল, স্ক্রু, আলোকসজ্জা সামগ্রী, কম্প্রেসার শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, বার্নিশ, বাইসাইকেল, আমদানি করা অ্যালকোহল, শ্যাম্পু, জুস, ইন্টারনেট খরচ, আমদানি করা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চকলেট, বিদেশি মোটরসাইকেল, বডি স্প্রের ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে পারে।

যেসব পণ্যের দাম কমছে ::
অর্থমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো আ হ ম মুস্তফা কামালের উত্থাপিত এই বাজেটে কিছু পণ্যে শুল্ক ও করহার কমানোর পাশাপাশি অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে কমতে পারে এসব পণ্যের দাম।
প্রস্তাবিত বাজেটে অটোমোবাইল, ফ্রিজ, এসির ওপর মূল্য সংযোজনের (মূসক) অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

একই কারণে দাম কমতে পারে দেশীয় সর্ষের তেলের। স্বর্ণ আমদানিতেও মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়েছ। ফলে স্বর্ণের দাম কমতে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন-চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার পাঁচ শতাংশ, যা ভিত্তিমূল্য নির্বিশেষে দুই শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রসুন ও চিনি আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে দুই শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কাপড় পরিষ্কার করার ডিটারজেন্টের দামও কমতে পারে। প্রস্তাবি বাজেটে ডিটারজেন্টের কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শুল্ক কমানো হয়েছে ইস্পাত শিল্পের রিফ্রাক্টরি সিমেন্টের ওপরও।

পাদুকা শিল্প ও টেক্সটাইল ফেব্রিসের বিভিন্ন সরঞ্জামাদিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রেফ্রিজারেটর ও এসির কাঁচামাল আমদানিতে বর্তমান যে রেয়াতি সুবিধা রয়েছে তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়ছে। ফলে রেফ্রিজারেটর ও এসির দাম কমতে পারে। দাম কতে পারে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের। কারণ এসব পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষিপণ্য রোলার চেইন, বল-বেয়ারিং, এমএস শিট, গিয়ার বক্স ও পার্টস, টায়ার-টিউবের শুল্ক কমানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে এসব পণ্যের দামও কমতে পারে।

সয়াবিন তেলের কেকের শুল্ক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য ও সয়া প্রোটিনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে মর্টার, ফটো সেনসেটিভ প্লেটের শুল্ক পাঁচ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া কম্প্রেসার শিল্পে লুব্রিকেটিং বা কাটিং ওয়েল এবং বিটুমিন মিনারেল ওয়েলের শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এক শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *