Main Menu

ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত রাখলো আইএমএফ

দুই সপ্তাহের মিশন শেষে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে এখনই ‘সবুজ সংকেত’ না দিয়ে বরং এক ধরনের ‘শেষ সুযোগের’ বার্তা দিয়েছে। অর্থাৎ এখনই কিস্তি স্থগিত থাকছে, তবে সব শর্ত পূরণে দ্রুত সংস্কার হলে আগামী জুনে এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

আইএমএফ মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল ২ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। এই আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস জানান, ‘বাংলাদেশ এখন সঠিক পথে থাকলেও, শর্ত পূরণ না হওয়ায় কিস্তি ছাড়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনা এখনও চলছে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যুটি আলোচিত হবে।’ তবে কিস্তি ছাড়ে ‘স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে পর্ষদে অনুমোদন পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

কোনও কোনও খাতে সংস্কার চাইছে আইএমএফ?

সূত্র জানায়, ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি মিলিয়ে প্রায় ১১৫ থেকে ১৩০ কোটি ডলার ছাড়ের জন্য এখনও বাংলাদেশকে আইএমএফের চারটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে হবে।

শর্তগুলো হলো—

বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা: আইএমএফ বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে জোর দিলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক এখনই পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নয়। তবে এখনকার সময়টি ‘বাজারভিত্তিক বিনিময় হার বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত’ বলেও মন্তব্য করেছেন ক্রিস, কারণ ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান কমেছে এবং রিজার্ভ কিছুটা স্থিতিশীল।

কর সংস্কার: কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, করছাড় ও বৈচিত্র্যময় করহার হ্রাসে সংস্কার আনা, এবং রাজস্ব আহরণ বাড়ানো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

ভর্তুকি হ্রাস: বিশেষ করে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও কৃষিখাতে সরকারের ভর্তুকি কমানোর ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি চায় আইএমএফ।

ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ: সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ বেড়েছে, যা আদায় ও তদারকির দুর্বল ব্যবস্থার ফল বলেও মনে করছে সংস্থাটি। তারা নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কার ও নীতিগত হস্তক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে।

জুনে জানা যাবে সিদ্ধান্ত

আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে অর্থাৎ জুন মাসে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তি ছাড়ে ‘স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট’ হলেও তা অনুমোদনের পর্যায়ে যেতে পারেনি।

এদিকে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমরা আইএমএফের শর্তগুলো পূরণে বাস্তবধর্মী অগ্রগতি দেখাচ্ছি। তবে কিছু খাত এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। জুনের মধ্যে সংস্কারে নির্ধারিত অগ্রগতি দেখাতে পারলে কিস্তি ছাড়ে কোনো বাধা থাকবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যেভাবে সময়ক্ষেপণ করছে, তাতে আইএমএফের ধৈর্যের পরীক্ষা চললেও এখনও সুযোগ পুরোপুরি ফুরায়নি। বরং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তব সংস্কারের মধ্য দিয়েই অর্থনীতির এই সংকটকালে বহির্বিশ্বের আস্থা অর্জন সম্ভব।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.