Home » ত্রিভুজ প্রেম – অরুন দাস

ত্রিভুজ প্রেম – অরুন দাস

বন্ধুমহলে অভি আর নবনীতা আশাকে নিয়ে প্রায়ই চায়ের টেবিল গরম হতো। কারণ অভি অনলাইনে খুব বেশি লেখালেখি করতো যেটা নবনীতা আশার চোখে পড়ে।

আর নবনীতা আশাও নাছূড়বান্দা। অভির প্রত্যেকটা পোস্টে কমেন্ট না করে হাল ছাড়েনা। যদিও তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন পরিচয় হয়নি তখনও।

প্রথম পরিচয়েই অভি বলে উঠে ওতো দীর্ঘ নাম মেইনটেইন করা যাবে না। নামটা ছোট করতে হবে। যেমন নবনীতা আশা থেকে শুধু নবনী অথবা শুধু আশা। নাম সেরকমই হওয়া উচিৎ, যেটা শুনা মাত্র কান থেকে হৃদয়ে পৌঁছে যায়। লম্বা নাম হৃদয় পর্যন্ত পৌছায় না, কানেই আটকে থাকে। ছোট নাম হৃদয় পর্যন্ত পৌছে হৃদয়কে নিশ্চুপ করে দেয় তাই সে শুধু আশা বলেই ডাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে নবীনতা আশাও সায় দিয়েছে।

আচ্ছা আশা তুমি আমার প্রত্যেকটা পোস্টে গৃহযুদ্ধ বাঁধাও কেন? রিপ্লাই দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, অবশ্য বুঝতে দেই না।
আশা ভ্রুকুচকে বলে, এটা আমার স্বাধীনতা, সে স্বাধীনতা মার্ক জুকারবার্গ আমাকে দিয়েছেন। আমি তোমার প্রত্যেক পোস্টে কমেন্ট করবো। সাহস থাকলে আনফ্রেন্ড কিংবা ব্লক মারতে পারো।

ইতোমধ্যে অভিকে নিয়ে আশার কিউরিসিটি বেড়ে গেছে খুব। সে লক্ষ্য করেছে অভির প্রত্যেকটা পোস্ট হৃদয় বিদারক। কেমন জানি লেখাগুলো রক্তঝরা। শব্দগুলোতে কষ্ট আর কান্না লেগে থাকে। কবিতায় বিরহের ভার আশার মনকে খারাপ করে দেয়।

পোস্টগুলো পড়লে অভির প্রতি এক ধরনের দূর্বলতা কাজ করে তার। সেই দূর্বলতা আশাকে ঘিরে ধরেছে। সে জানতে চায় অভির হৃদয়ের আহাকারের কারণ। অভির পাশে দাঁড়াতে চায়। অভির সাথে যোগাযোগ কন্টিনিউ করে। ইতোমধ্যে অভি জেনে গেছে যে, আশা অন্য কারো প্রেমিকা। তাই অভি নিজেকে কন্ট্রোলে রাখে যাতে আশার প্রতি দূর্বল না হয়ে পড়ে। কিন্তু নাছুড়বান্দা আশার কাথাবার্তা, স্মার্টনেস, সৌন্দর্য্য, ওভার কেয়ারিং অভিকে ভালোবাসা নামক গর্তে ফেলে দেয়। শুনেছি অন্ধলোকেরা গর্তে পড়লে তাকে মানুষ হাত ধরে টেনে তুলে। কিন্তু ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে কেউ গর্তে পড়লে সে গর্ত থেকে কেউ টেনে তুলে না।

১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। তারা ঠিক করেছে ওইদিন দেখা করবে। তখন অভিকে হৃদয়ের রক্তঝরা কথাগুলো বলতেই হবে, এরকম প্রমিজ করিয়েছে আশা। কথা মতো দেখা হলো। প্রথম দেখায় একটা মেয়ে এতো সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে অভি আশাকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতো না। ইতোমধ্যে আশা অভির হাত শক্ত করে ধরেছে। তাতেই অভির হৃদয়টা প্রসারিত হতে লাগলো। বুকটা হালকা হতে লাগলো, মনে হচ্ছিল যেন এতোদিন তার অপেক্ষায়ই ছিল অভি।

অবশেষে অভি তার ভারাক্রান্ত, ব্যথিত পোস্ট গুলোর কারণ বললো যে, অপ্রাপ্তি হৃদয়ের আকাশকে ভারী করে রেখেছে। কাউকে না পাওয়ার বেদনা তাকে ক্ষত বিক্ষত করছে। সে ভার মুক্ত হতে চায়, চায় সুনীল আকাশে-ভোরের নিষ্পাপ কুয়াশার মতো স্নিগ্ধ হতে। একথা বলেই অভি অশ্রুসজল চোখে দ্রুত চলে যায়। তাতে আশা আরো দূর্বল হয়ে পড়ে। অভিকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে আশা নিজেই অভির প্রেমে পড়ে যায়। সেদিকে অনিমেষ অর্থ্যাৎ আশার প্রেমিক আশাকে নিয়ে প্রেমের স্বর্গ রচনা করছে। গ্রেজুয়েশন শেষ করেই আশাকে নিয়ে সংসার শুরু করবে। আর মাত্র কয়েক মাস বাকি।

আশা অনিমেষকে ভালোবাসে, অনিমেষ আশাকে। এদিকে অভি আশার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে আবার আশাও অভির প্রতি। অভি আশাকে পাশে পেয়ে ভালো থাকতে চায় আর আশা অভিকে ভালো রাখতে চায়। আশার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে শুধু অভিকেই ভালোবাসতে। নিয়ম, পার্থক্য, ব্যবধান আর দূরত্বকে এক করে দিতে চায়। কিন্তু অনিমেষকে কষ্ট দিতে চায় না। ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী আর পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।

ইদানিং অভি স্বার্থপর হয়ে গেছে। সে ভালো থাকার জন্য অনিমেষকে কষ্ট দিয়ে হলেও আশাকে কাছে পেতে চায়।
এদিকে আশা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সে কাউকেই কষ্ট দিতে চায় না। কিন্তু পৃথিবীতে একটা কথা আছে, সবাইকে খুশি করতে চাইলে কাউকেই খুশি করা যায় না।

সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী ফাল্গুনে অনিমেষ আশাকে ঘরে তুলতে চায় কিন্তু আশা রাজী নয়। সে আরো কিছুদিন অভির পাশে থাকতে চায়। দু’জনকে ভালোবেসে আশার কাছে ভালোবাসা এখন তেতো এক করলার নাম।

আশা ভাবে অভির একটা হৃদয় আর কতবার পুড়বে। প্রথম জীবনে কেউ একজনকে ভালোবেসে পেলো না। এখন আমাকে ভালোবেসেও জুটলো কেবল যন্ত্রনা।

আশা অভির সাথে দূরত্ব বাড়াতে লাগলো। যেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ হয়না সেখানে মায়া কাটাতে হয়। তাই সে দূরে সরে যেতে লাগলো। অভি বুঝতে পারছে কেন আশা দূরে সরে যাচ্ছে। সে অনিমেষকে কষ্ট দিতে চায় না। অভিও ঠিক করেছে আর কাউকে ভালোবাসবে না। অভির ভাবনা হলো- দিনশেষে কেউই পাশে থাকে না। তাই সে তার চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখে। জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, থাকে শুধু মুখোমুখি বসিবার -অন্ধকার।। অভি আজকাল শুধু অন্ধকার দেখে। শুধু অন্ধকার। নিকষ কালো অন্ধকার………

সাহিত্যিক ও যুব সংগঠক

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *