Main Menu

সিলেটের ময়না মিয়াকে ৬ টুকরো, স্ত্রী ফাতেমা দিলেন লোমহর্ষক জবানবন্দি

রাজধানীর মহাখালী থেকে সিলেটের ময়না মিয়া নামে একজনের হাত-পা ও মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহতের প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন দায় স্বীকার করে আদালতে লোমহর্ষক জবানবন্দি দিয়েছেন। রবিবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিস মাসুদ-উর-রহমানের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিন রিমান্ড শেষে আসামি ফাতেমা খাতুনকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় ফাতেমা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে, গত ১ জুন আসামি ফাতেমাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আসামির ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার পাঁচ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

স্বামী হত্যার ঘটনায় গত ৩১ মে ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ফাতেমার দেখানো জায়গায় গিয়ে ময়না মিয়ার মাথা উদ্ধার করা হয়। পরে বোরখা, ভিকটিমের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা, শীল-পাটা উদ্ধার করা হয়।

মামলার সূত্রে জানা যায়, হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে গত ২৮ মে রাতে জুসের সঙ্গে স্বামী ময়না মিয়াকে খাইয়ে দেন। এরপর ময়না মিয়া সারারাত-সারাদিন ঘুমে অচেতন থাকলে সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পায় এবং স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমা আবারও তার মুখে ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস ঢেলে দেন। এ পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়না মিয়ার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এ সময় ময়না মিয়া আর্তনাদ করতে থাকলে ফাতেমা বুকের উপরে বসে ঘরে থাকা স্টিলের চাকু দিয়ে গলাকাটা শুরু করেন। ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়ে ওড়না ছিঁড়ে তার হাত মুক্ত করে ও ফাতেমার হাতে খামচি এবং মুখ খুলে কামড় দেয়। এতে ফাতেমার রাগ আরো বেড়ে যায়।

ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ভিকটিমের বুকের উপরে উঠে গলার বাকি অংশ কেটে দেয়। পরে সকালে ফাতেমা লাশ গুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়নার হাতের চামড়া ও মাংস কাটে এবং ধারালো দাঁ দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগে রাখে। একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে, কেটে ফেলা দুই পা এবং দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। এলাকা থেকে ১৩০০ টাকায় একটি অটোরিকশা ভাড়া করে প্রথমে আমতলী এলাকায় শরীরের মূল অংশ ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মহাখালী এনা বাস কাউন্টারের সামনে দুই হাত-দুই পা ভর্তি ব্যাগ রেখে চলে আসে বাসায়। বাসায় এসে সেখান থেকে খণ্ডিত মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের পূর্বপ্রান্ত থেকে গুলশান লেকে ফেলে দেয়। এরপর বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।

ফাতেমা ভেবেছিলেন, ময়নার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। কিন্তু উদ্ধার করা লাশের হাত থেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইসের সঙ্গে মিলিয়ে পুলিশ জানতে পারে নিহতের নাম ময়না মিয়া, বাড়ি কিশোরগঞ্জে। এরপর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেখানো মতেই ভিকটিমের রক্তমাখা জামা-কাপড়, ধারালো ছুরি ও দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শিল-পাটা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত ময়না মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতেন শিল্পী। দুই সন্তানকে নিয়ে কড়াইল বস্তির ওই বাসায় ভাড়া থাকলেও সব সময় চাইতেন স্বামী ময়না মিয়াও তাঁদের সঙ্গে থাকুক। স্বামীকে বশে আনতে নিয়েছিলেন তাবিজও। কিন্তু এত কিছুর পরও ময়না মিয়ার ভালোবাসা পেতেন না। উল্টো ময়না মিয়া আরেক নারীকে বিয়ে করেন।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.