অনলাইন ডেস্ক: আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। পঞ্চাশ বছর আগে এই দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের যৌথ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার ঘোর কাটিয়ে বাংলাদেশে সূচিত হয়েছিল নতুন যাত্রা।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রাস্তায় নেমে আসে হাজারো মানুষ, উদযাপিত হয় সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যার পরপরই রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
সেদিন জাতি আবারও শুনেছিল তার কণ্ঠ- ‘আমি জিয়া বলছি’। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে যে কণ্ঠে জাতি শুনেছিল স্বাধীনতার আহ্বান, আবারও সেই কণ্ঠে তারা শুনেছিল আশ্বাসের সুর। মুহূর্তেই জেগে উঠেছিল ১৯৭১ সালের মুক্তির প্রেরণা, যেন বুকের ভার নেমে গিয়েছিল- এক স্বস্তির নিঃশ্বাসে মুখরিত হয়েছিল দেশ।
স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লব ও বিজয়ের মিছিলে ভরে গিয়েছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তা। সৈনিক ও সাধারণ মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে উচ্চারণ করেছিল: ‘সিপাহী-জনতা ভাই ভাই; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ; মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ; সিপাহী-জনতা এক হও।’
ইতিহাসের এই দিনটি তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস নামে পরিচিতি পায়। এই বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ অরাজকতা ও অনিশ্চয়তার অবস্থা থেকে উত্তরণের নতুন পথে পা রাখে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশকে ভূরাজনৈতিক, সম্প্রসারণবাদী ও নব্য-ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের জাল থেকে মুক্ত করেন।
জাতীয় সংকটের সেই ভয়াল মুহূর্তে দেশপ্রেমিক বিপ্লবী সৈনিক ও জনতা ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের পরাস্ত করে জেনারেল জিয়াকে নেতৃত্বে আনেন। ৭ নভেম্বরের পর থেকেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাতন্ত্র্যবোধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশি জাতীয় সংস্কৃতি ও পরিচয়ের বিকাশ শুরু হয়। নতুন ভোরের সেই ইতিহাসের নায়ক হয়ে ওঠেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে তার স্মৃতি মুছে ফেলার নানা ষড়যন্ত্র হলেও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে তিনি স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।
বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচি:
জাতীয় ইতিহাসের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে- ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় প্রতাকা উত্তোলন করা হবে। এদিন সকাল ১০ টায় দলের জাতীয় নেতারা সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এদিন বেলা ৩ টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের হবে। একই দিন সারাদেশে বিএনপি’র উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন স্ব স্ব উদ্যোগে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে গত ৫ নভেম্বর শ্রমিক দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ছাত্রদল ৮ নভেম্বর আলোচনা সভার আয়োজন করছে। এছাড়া ছাত্রসংগঠনটির উদ্যোগে ৭ ও ৮ নভেম্বর টিএসসি-তে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে। ওলামা দল ৯ নভেম্বর এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করবে। আর তাঁতী দল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে ১০ নভেম্বর। এছাড়া কৃষকদলের আলোচনা সভা ১১ নভেম্বর। আর জাসাস কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে ১৩ নভেম্বর।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি’র উদ্যোগে ১২ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ডকুমেন্টরি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়াসহ ফেসবুক, ইউটিউব, অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। আর ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে পোস্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

প্রতিনিধি