Main Menu

‘মাদরাসা শিক্ষা দু’নলা বন্দুক’

শামসুল হক শারেক:

‘মাদরাসা শিক্ষা দু’নলা বন্দুক’এটি আমার কথা নয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মতিয়ার রহমানের কথা। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নেয়ার সময় একটি ইন্টারভিউ বোর্ডে একথাটি বলেছিলেন তিনি। ২০১২ সালে আমার বড় মেয়ে ডাক্তার মারজান বিনতে শারেক ঢাকার সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় ইন্টারভিউ বোর্ডে আমাকেও পার্মিট করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেদিন তৎকালীন ধর্ম সচিব মতিয়ার রহমান ছিলেন ওই ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রধান।

দুইজন সাবেক সচিব ছাড়াও অনেক জ্ঞানী গুণীরা ছিলেন ওই কলেজের গভার্নিং বডির সদস্য। ইন্টারভিউয়ের সময় ওনাদের প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মারজানকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। কেউ বলেন তুমি ইংরেজি পড়েছ? কেউ বলেন তুমি গণিত পড়েছ? আর কেউ বলেন তুমি কি ফিজিক্স-বায়োলজি পড়েছ? অথচ মেয়ের দাখিল ও আলিম পরীক্ষার ফলাফলের ট্রান্সস্ক্রিপ্ট গুলো ছিল সকলের হাতে হাতে। আর সব পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাসত্ত্বেও ইন্টারভিউতে এধরণের প্রশ্ন করায় আমি মনে করলাম হয় প্রশ্নকারীরা মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে মহা অজ্ঞ। নতুবা মাদরাসা শিক্ষার প্রতি তাদের অবজ্ঞার কারণে এই তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাব।

তখন পার্মিশন নিয়ে আমি বললাম, স্যরি ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছে আমি জানতে চাই- আপনাদের হাতে থাকা মেয়ের ট্রান্সস্ক্রিপ্ট গুলো কি কোন দোকানে আপনারা বিক্রি করেন? ওখান থেকে আমরা কিনে নিয়ে এসেছি? নাকি ১০/১২ বছর পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিয়ে এগুলো অর্জন করা হয়েছে? দয়া করে জানাবেন কি?

তখন ধর্ম সচিব মতিয়ার রহমান সাহেব বলে উঠলেন, তোমরা জাননা যে, সাম্প্রতিক সময়ে মাদরাসা শিক্ষা সিলেবাস স্কুল কলেজের শিক্ষা সিলেবাস থেকে অনেক উন্নত। মাদরাসা সিলেবাসে কুরআন -হাদিস, ফিকাহ ও আরবী সাহিত্যের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বায়োলজি, ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রি সহ সব আধুনিক বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত। তাই অনায়াসেই বলা যায় স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জানা শুনা ও জ্ঞান ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ। বর্তমানে ‘মাদরাসা শিক্ষা দু’নলা বন্দুক’। দ্বীন দুনিয়া ও পরকাল সবই আছে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়।

আল্লাহর মেহেরবানীতে মারজানের পরীক্ষার রেজাল্ট ছিল প্রথম শ্রেণী থেকে ইন্টার পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাসে এবং পাবলিক পরীক্ষায় প্রথম বা এ-প্লাস। প্রাথমিকে কক্সবাজার আল হেরা একাডেমিতে লেখাপড়া করলেও তার দাদা আলহাজ্ব আসায়াদ আলীর প্রতিষ্ঠিত উখিয়ার গয়ালমারা প্রাইমারী স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে সে ট্যালেন্টফুুলে বৃৃত্তি লাভ করে।

৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদরাসায় ভর্তি হয়ে ইন্টার বা আলিম পর্যন্ত সে ওখানেই পড়ালেখা করে।
ওখান থেকে ৮ম শ্রেণীর বৃত্তি, দাখিল ও আলিম (বিজ্ঞানে) পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় মারজান। সব পাবলিক পরীক্ষায় সে স্কলারশিপ পেয়ে ধন্য হয়েছে।

বলছিলাম ‘সাপ্পোরো ডেন্টাল’ কলেজে মাদরাসা শিক্ষার্থী মেয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ইন্টারভিউ এর কথা। আলহামদুলিল্লাহ, মারজান ওখান থেকে সফলতার সাথে বিডিএস পাশ করেছে আরো তিন বছর আগে।

প্রসঙ্গ ক্রমে মাদরাসা শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষিতদের নিয়ে যাদের অস্বস্তি তাদের স্বস্তির জন্য দু’ চারটি কথা না বললে কেমন হয়। উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষিতরা কত সম্মানের আসন অলংকৃত করেছেন এবং কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তার কয়েকটি নিম্নরূপ –

হয়ত তাদের মনে পড়বে- জওহার লাল নেহেরুর মত শত শত বিখ্যাত (হিন্দু ধর্মের) নেতারা থাকতে ভারতের নেহেরু মন্ত্রীসভার শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মাদরাসা শিক্ষিত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।

ঐতিহ্যবাহী ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এক সময়ের সভাপতি ছিলেন, জাতীয় নেতা মাদরাসা শিক্ষিত মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সম্পাদক ‘দৈনিক আযাদ পত্রিকার’ সম্পাদক মাওলানা আকরম খাঁ ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষিত।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষিত হাফেজে কুরআন।

একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। তিনি ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষিত।

বাংলাদেশ সরকারের একাধিকবার মন্ত্রী ছিলেন দৈনিক ইনকিলাব এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও দেশের মাদরাসা শিক্ষিতদের নেতা আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুল মান্নান। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন।

খবর নিয়ে জানতে পেরেছি একসময় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন মাদরাসা শিক্ষিত মুফতি মাওলানা তক্বি ওসমানী।

একইভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন, মাদরাসা শিক্ষিত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা নুরুল ইসলাম ও শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এছাড়া জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, খতীবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, মাওলানা আতহার আলী, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী সহ অসংখ্য মাদরাসা শিক্ষিত ওলামায়ে কেরাম।

অনেকেই হয়ত জানেন না আওয়ামী লীগ সরকারের সম্প্রতি বিদায়ী সফল মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষিত আলেমে দ্বীন। যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়োগ দেয়া আজকের ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আহসান সাঈদ একজন মাদরাসা শিক্ষিত আলেমে দ্বীন।

সম্প্রতিক কালে ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় বেশ কবার প্রথম হয়েছেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে বুঝাযায় মাদরাসা শিক্ষিতরা মোটেও পিছিয়ে নেই। তৎকালীন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মতিয়ার রহমানের কথাই যেন সঠিক ‘মাদরাসা শিক্ষা দু’নলা বন্দুক’।

আজকের গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে হতে পারে মাদরাসা শিক্ষার মত বহুমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আরো বাড়বে এবং একমুখী শিক্ষার গুরুত্ব হ্রাস পাবে।

ঢাকার উত্তরার সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজের তখনকার প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন পর্যায়ক্রমে প্রফেসর ডাক্তার আব্দুল হান্নান ও প্রফেসর ডাক্তার মুহিউদ্দিন আহমদ। ওনারা খুবই সজ্জন ছিলেন। যেকোন সময় তাঁদের সহযোগিতা ছিল উল্লেখ যোগ্য। তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

আমার মেয়ে মারজানকে ‘সাপ্পোরো ডেন্টাল কলেজে’ ভর্তির বিষয়ে আমাকে পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সচিব পরে সফল মন্ত্রী পরিষদ সচিব বর্তমানে বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি ছাত্র জীবন থেকে আমার আপনজন আমাদের গর্ব জনাব শফিউল আলম। আজকের এই নিবন্ধে আমরা তাঁর প্রতি জানাচ্ছি অবারিত কৃতজ্ঞতা৷

-৪ এপ্রিল ২০২১ ইং।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.