Main Menu

মঞ্চনাটকে আলো ছড়াচ্ছেন জ্যোতি


বাংলাদেশে বর্তমানে দাপুটে এক মঞ্চাভিনেত্রীর নাম জ্যোতির সিনহা। গত ২০ বছর ধরে দেশে বিদেশে মঞ্চ মাতাচ্ছেন তিনি। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত আছেন জ্যোতি সিনহা। একাধারে তিনি অভিনেত্রী, নির্দেশক, কস্টিউম ডিজাইনার ও কোরিওগ্রাফার। তার অভিনিত মঞ্চনাটকের মধ্যে কহে বীরাঙ্গনা, লেইমা, দেবতার গ্রাস, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, ইঙাল আঁধার পালা, বিদেহ, রুধিররঙ্গিণী উল্লেখযোগ্য। শুধু কহে বীরাঙ্গনা দেশের বিভিন্ন জায়গাসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে ৭৯ বার মঞ্চস্ত হয়েছে। 

বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগতের অন্যতম সমৃদ্ধ মণিপুরি থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শিল্পীর স্বীকৃতি হিসেবে ইতোমধ্যে পেয়েছেন আরণ্যক প্রবর্তিত দীপু স্মৃতি পদক, প্রাচ্যনাট তরুণ নাট্যকর্মী সম্মাননা, জীবনসংকেত নাট্যগোষ্ঠী সম্মাননা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোক রায় স্মৃতি পদক, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সাহিত্য প্রকাশনা সংস্থা ‘পৌরি’র সম্মাননা। এছাড়া ভারতের আসামের মণিপুরি অডিও ভিজ্যুয়াল এল এল প্রোডাকশন তাকে ‘রত্ননন্দিনী’ খেতাব প্রদান করে।

জ্যোতি সিনহার জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৯ নভেম্বর সিলেটে। পৈতৃক নিবাস মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে। পিতা মৃত ললিত মোহন সিংহ, মাতা ভাগ্যবতী সিনহা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, ‘মণিপুরি সংস্কৃতি ও রাসলীলা : একটি সমাজতাত্ত্বিক পাঠ’ শিরোনামে এমফিল করেছেন। বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার হিসেবে তিনি কর্মরত।

সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোরের সাথে আলাপে তিনি জানিয়েছেন তার বিভিন্ন কাজের কথা। তিনি জানান, প্রথম মঞ্চে ওঠেন কুড়ি বছর আগে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মেয়ে জ্যোতি শৈশবেই নাচ–গানের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। বিটিভিতে লায়লা হাসানের ‘এসো নাচ শিখি’ অনুষ্ঠানে গিয়ে নাচের সঙ্গে পরিচয়। কিছুদিন গান শিখেছেন রামকানাই দাশের কাছে। পরে মণিপুরি থিয়েটারের শর্মিলা সিনহার কাছেও গান শিখেছেন।

১৯৯৬ সালের ২ জানুয়ারি জ্যোতির বাবা মারা যান। তখন জ্যোতির বয়স ১২ বছর। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে বাবার লাশ নিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ফেরা এবং সেখানেই থিতু হওয়া। সে বছরই বর্তমান মুনিপুরি থিয়েটারের সভাপতি শুভাশিস সিনহা মণিপুরি থিয়েটারের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের পয়লা বৈশাখে কিশোরী জ্যোতি বিষু উৎসবের নাটক আজবপুরের বর্ষবরণ–এ রাজকন্যার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর থেকে মণিপুরি থিয়েটারের অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

২০০০ সালে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় মঞ্চে এসেছিল শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। ২০০১ সালে ঢাকায় নাটকটি মঞ্চস্থ হলে সাড়া পড়ে যায়। সেই যে শুরু এখনো কাজ করে যাচ্ছেন দাপটের সাথে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা এবং মনিপুরি ভাষায় নাটক মঞ্চস্থ করে প্রসংশিত হয়েছেন। অভিনয় করেছেন নিজ দল মণিপুরি থিয়েটারের ইঙাল আধার পালা, দেবতার গ্রাস, ভানুবিল, ঢাকা থিয়েটার ও থিয়েটার আর্ট মিলে হৃৎমঞ্চ রেপার্টরিতে করি রুধির রঙ্গিনী।

বাবা মারা যাওয়ায় দুই ভাগ হয়ে যায় জ্যোতির শৈশব। বাবার মৃত্যু পূর্ববর্তী ও মৃত্যু পরবর্তী। বাবা চাইতেন মেয়ে সংগীতশিল্পী হোক। গানে হাতেখড়িও হয়েছিল এক শিক্ষকের কাছে।

জ্যোতি বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর যখন গ্রামে ফিরি তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবেলা করতে আমাদের দুই বোনকে নিয়ে মা এক কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন। মামা-কাকাদের আশ্রয়ে বড় হয়েছি। মণিপুরি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শুভাশিস সিনহার অনুপ্রেরণায় গান ছেড়ে নাটকের জীবন শুরু। এখনো চলছে নাটুকে জীবন, রক্তের সঙ্গে যেন একাকার হয়ে গেছে থিয়েটার।’

মা ভাগ্যবতী সিনহা আর একমাত্র ছোট বোন স্বর্ণালী সিনহাকে নিয়ে ভালোই আছেন জ্যোতি । স্বর্ণালীও এখন পুরোদস্তুর থিয়েটারকর্মী। মঞ্চে ‘লেইমা’ নাটকে লেইমা, ‘দেবতার গ্রাস’-এ মা, ‘কহে বীরাঙ্গনা’য় মহাভারতের ঐতিহাসিক নারীদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

ফরাসী দূতাবাসের প্রযোজনায় ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঞ্চের দাপুটে অভিনেত্রী জ্যোতি সিনহার একক অভিনয়ে নির্মিত নতুন নাটক ‘হ্যাপি ডেইজ’-এর চারটি বিশেষ প্রদর্শনী। ফরাসি দূতাবাসের সহায়তায় নির্মিত এ নাটকটি এবার মঞ্চস্থ হবে কমলগঞ্জের ঘোড়ামারাস্থ মণিপুরি থিয়েটারের নাটমণ্ডপে। ‘হ্যাপি ডেইজ’ নাটকটি অ্যাবসার্ড নাটকের জন্য বিখ্যাত, ‘ওয়েটিং ফর গডো’ খ্যাত নোবেলবিজয়ী নাট্যকার স্যামুয়েল বেকেটের লেখা। 

জ্যেতি সিনহা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট্য সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্য আসাদুজ্জামান বলেন, জ্যেতি প্রতিভাবান একজন শিল্পী সে দাপটের সাথে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও বিপুল জনপ্রিয়। তার অভিনয় অন্যান্য গুনিজনের মত আমাকেও মুগ্ধ করে।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.