Home » অভিষেক টেস্ট রাঙাতে সিলেটে রঙিন আয়োজন

অভিষেক টেস্ট রাঙাতে সিলেটে রঙিন আয়োজন

ইট-পাথরের জঞ্জাল নেই, আছে মুক্ত আকাশ। সেই আকাশে বিহঙ্গদের উড়াউড়ি। যান্ত্রিকতার কোলাহল নেই; চারপাশে সবুজের সমারোহ। পাখি যেমন প্রকৃতির বুকে বাসা বাঁধে, ঠিক যেন সেরকমই প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। চলতি বছরের শুরুর দিকে নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। কিন্তু বুকে সবুজের গালিচা নিয়ে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের অপেক্ষায় ছিল এই স্টেডিয়াম। এবার ফুরোচ্ছে সেই অপেক্ষাও। ৩ নভেম্বর থেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি খেলতে সিলেটের মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

এই ম্যাচ দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত হচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আর সিলেটের মাঠের এই অভিষেক টেস্ট রাঙাতে থাকছে রঙিন আয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অভিষেক টেস্ট ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ স্মারক কয়েন তৈরি করা হচ্ছে। এই কয়েন দিয়েই ম্যাচের টস হবে। এছাড়া থাকছে বিশেষ স্যুভেনিয়র ও বিশেষ একটি প্রকাশনা।
বিশেষ প্রকাশনাটির নাম ‘গ্লিম্পস অব সিলেট’। এই রঙিন প্রকাশনায় সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটন, ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইতিহাস প্রভৃতি নানা তথ্য ওঠে আসবে। এই প্রকাশনায় লিখছেন দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ক্রীড়া সাংবাদিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি, বিসিবি পরিচালকদের লেখা এই প্রকাশনায় ঠাঁই পাবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক শফিউল আলম নাদেল বলেন, ‘সিলেটের অভিষেক টেস্ট ম্যাচকে স্মরণীয় রাখতে আমরা স্মারক কয়েন করছি। স্যুভেনিয়রের পাশাপাশি একটি বিশেষ প্রকাশনাও থাকছে। এই প্রকাশনাটি সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে বের হচ্ছে।’
সিলেটের অভিষেক টেস্ট নিয়ে ৩১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের তথ্যও জানিয়েছেন এই বিসিবি কর্মকর্তা।
একই রকম তথ্য জানিয়েছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া ম্যানেজার ফরহাদ কোরেশী।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের জন্য মাস কয়েক আগে বিসিবি নতুন কিউরেটর সি ম আগারওয়ালকে দায়িত্ব দেয়। এই কিউরেটরের তত্ত্বাবধানেই টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠ ও উইকেট।
আগামী ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর সিলেটে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচের টিকেট সর্বনিম্ন ৫০ টাকায় পাওয়া যাবে। স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারি ও গ্রিন হিল এরিয়ার টিকেট ৫০ টাকা, পূর্ব গ্যালারির টিকেট ৮০ টাকা, ক্লাব হাউজের টিকেট ২০০ টাকা এবং গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকেট ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে।
ভারতীয় ইতিহাসবিদ রণজয় সেন তাঁর ‘ন্যাশন অ্যাট প্লে : অ্যা হিস্টোরি অব স্পোর্ট ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, উপমহাদেশের প্রথম রেকর্ডকৃত ক্রিকেট ম্যাচ ১৮৪৫ সালে হয়েছিল সিলেটে।
এরপর সুরমা, গঙ্গা, যমুনায় জল গড়িয়েছে অনেক। স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ, বদলে গেছে সিলেট। সেই উনিশ শতকে সিলেটে কোন ধরনের মাঠে ক্রিকেট হয়েছিল, তা খুঁজতে আশ্রয় নিতে হবে ইতিহাসের। তবে বর্তমানে সিলেটে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংখ্যা দুটি। এর একটি ক্রিকেটের, অপরটি ফুটবলের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৪ সালে অভিষিক্ত হয় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের কয়েকটি ম্যাচ হয়েছিল এখানে। এরপর ২০১৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচও হয়েছিল এখানে। এর বাইরে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাচ প্রায় নিয়মিতই হচ্ছে এই মাঠে।
তবে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ম্যাচের জন্য অপেক্ষা ছিল সিলেটের দর্শকদের। সেই অপেক্ষা শেষ হয় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হন সাকিব-তামিমরা। কিন্তু পরাজয়ের নীল বেদনায় সেদিন পুড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবনাতেই আসছে না মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের। টেস্ট জয়ের মিশনে শনিবার দুপুরে পূণ্যভূমিতে পা রেখেছে বাংলাদেশ দল।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *