1. abusufian7389@gmail.com : .com : sk .com
  2. ashfakur85@gmail.com : আশফাকুর রহমান : Ashfakur Rahman
  3. b.c.s.bipro@gmail.com : বিপ্র দাস বিশু বিত্রম : Bipro Das
  4. zihad0292@gmail.com : Zihad Ul Islam Mahdi : Zihad Ul Islam Mahdi
  5. ahmedmdmahfuz@gmail.com : মোঃ মাহফুজ আহমদ : মোঃ মাহফুজ আহমদ
  6. nazimahmed2042@gmail.com : Najim Ahmed : Najim Ahmed
  7. shahadotchadni@gmail.com : Md Sh : Md Sh
  8. ashfakur86@gmail.com : শুদ্ধবার্তা ডেস্ক : SB 24
  9. shuddhobarta24@gmail.com : shuddhobarta24@ : আবু সুফিয়ান
  10. surveyor.rasid@gmail.com : Abdur Rasid : Abdur Rasid
হৃদয় ছোঁয়া গল্প        
শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৪০ অপরাহ্ন

হৃদয় ছোঁয়া গল্প

  • সংবাদ প্রকাশের সময় : বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

*মাটির কলস*

*আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী*
*(বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী)*

(প্রথম পর্ব)

পাড়াগাঁয়ে আমার বাড়ি। পৌষের কুয়াশা ভেজা ভোরে গিন্নীর কোমল হাতের পরশে ধন্য নকশী কাঁথাখানা গায়ে জড়িয়ে হৃদয়ের ক্যামেরাটি অন করে বেরিয়ে পড়লাম।
মানব হৃদয়ে আল্লাহ তা’য়ালা কী আজব ক্যামেরা সংযোজন করে রেখেছেন। যত ইচ্ছে ফটো উঠাও এক পয়সাও খরচ হবে না, রিল পরিবর্তন করতে হবে না। নিপুণ স্রষ্টা মানব দেহে এমন অনেক অদৃশ্য গোপন শক্তি দান করেছেন যেগুলো ধরা ছোঁয়ার উর্ধ্বে।

ঘর হতে বের হয়ে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কল্পিত নকশীকাঁথার মাঠের কিনারে সদ্য সমাহিত মরহুম ছলিম মিয়ার কবর যিয়ারত করলাম। কুয়াশা সিক্ত কেয়াবন পাশে অর্জুন গাছটার তলে নিঝুম নিরালা পরিবেশে তাঁর কবর। কবর থেকে ডান দিকে প্রায় দু’শ হাত দূরে ছলিমের বাড়ি, বাড়ির যত বাঁশ গাছ ছিলো সবই বিক্রি করেছে ছলিম তাঁর জীবদ্দশায়। কচুরিপানা ভর্তি ছোট পুকুরটির কিনারে কয়েকটি কলাগাছ, একটি আমগাছ ও ছোট একটি বাঁশ ঝাড় ছাড়া সবই ধ্বংস হয়ে গেছে ক্ষুধার আগুনে। পুকুর পারে আগুন পোহাবার জন্য এগিয়ে গেলাম। সেখানে ছলিমের অনাথ ছেলে-মেয়েরা খড় ও শুকনো পাতা সংগ্রহ করে আগুন ধরিয়ে চারপাশে বসে আগুন পোহাচ্ছে।

ছলিমের ছেড়া লুঙ্গি গলায় বাধা তাঁর ছোট ছেলেটি কচি হাতে এক মুষ্টি খড় এনে আমাকে বসতে দিল। ওদের পাশে বসে আমার মনের ক্যামেরায় তাদের করুণ চিত্রগুলি তোলার চেষ্টা করলাম। কি সুন্দর ফটো! পিতার বিরহানলে দগ্ধ, পৌষের শীতে জর্জরিত, ক্ষুধার আনলে ঝলসানো নিশ্চুপ নির্বাক গুটি কতেক অসহায় অনাথ-অনাথার মাঝে বসে আমি বিস্ময়ে নির্বাক। ওদের করুণ চিত্রগুলি আমার অন্তরের অন্তস্তলে আলোড়ন সৃষ্টি করল। কাঁথার এক কোণায় বাঁধা ছিল কিছু মুড়ি; ওদের হাতে তুলে দিলাম। আমি অভাগার-নগন্য দান কয়েক দানা মুড়ি তারা ভক্ষণ করে ক্ষণিকের জন্য হলেও তৃপ্তির হাসি হাসলো।

বড় ছেলেটি তাঁর বাপের লুঙ্গির ছেড়া একটা টুকরায় এক মুষ্টি মুড়ি খুব সাবধানে বেধেঁ রাখলো বিধবা মায়ের জন্য। বিদায় নিলাম। ছলিমের কবর ও তাঁর সদ্য পরিত্যক্ত বাড়ির মাঝখানে শুন্য ময়দানে দাঁড়িয়ে শুনলাম কেয়াবন হতে কুয়াশার বুক চিরে ভেসে আসছে কান্না মিশ্রিত ফরিয়াদ। আমাকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে হে পাষাণ! এক মুষ্টি মুড়ি ওদের হাতে তুলে দিয়েই কি তুমি তোমার কর্তব্য কর্ম শেষ করলে? তুমি অগ্রসর হও, এদের জীর্ণ কুড়েঘর খানার চিত্র তোমার ক্যামেরায় তুলে নিয়ে যাও। এ চিত্রকে যদি তুমি নিছক সাহিত্য সামগ্রী মনে করো তবে মারাত্মক ভুল করবে। এ করুণ চিত্রগুলি তোমার কর্তব্য কর্ম নির্ধারণের জন্য মনের এলবামে সংরক্ষিত রাখো।

এ মর্মস্পর্শী করুণ ফরিয়াদকে উপেক্ষা করতে পারলাম না। অনাথ-অনাথাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ভগ্ন কুড়ে ঘরটির সামনে এসে দাঁড়ালাম। ভগ্ন বেড়ার ফাঁক দিয়ে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঘরের মেঝেতে খড় বিছানো, তাঁর উপর ভাঙ্গা চাটাইয়ের টুকরো বিছানো। বুঝতে পারলাম ছলিমের অভাগা সন্তানেরা এ বিছানায় রাত্রি যাপন করে। দক্ষিণের বেড়ায় যা কিছু ছিলো সব খসে পড়ে গেছে। শুন্য স্থানে একটি মোটা ছেড়া চাদর ঝুলানো। এ চাদরের আড়ালে ছলিমের বিধবা স্ত্রী নামাযের চাটাই বিছিয়ে সারারাত ইবাদত করেন ও কবরবাসী স্বামী ও খড়ের বিছানায় পৌষের শীতে শুয়ে থাকা অসহায় সন্তানদের জন্য আল্লাহর দরবারে করুণ আহাজারী করেন।

ঘরের চালায় স্থানে স্থানে শুকনো কলাপাতা ভাঙ্গা চাটাইয়ের টুকরোগুলি দেখে বুঝতে পারলাম গত বর্ষা মৌসুমে বেচারা ছলিম বৃষ্টির প্রকোপ থেকে ঘরটিকে নিরাপদ রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ঘরের সামনে আমগাছ তলে দু’আটি ছন দেখে জিজ্ঞেস করলাম এগুলো তোমাদের কে দান করেছেন! তারা বলল আমাদের পিতা তাঁর মৃত্যুর একদিন পূর্বে খাসিয়া পাহাড়ে ছন আনতে যান। তিনি সারাদিন পরিশ্রম করে এ দু’আটি ছন নিয়ে সন্ধ্যা বেলা ঘরে ফিরে আসেন। ঘরে ফিরে মাগরিবের নামায পড়ে কাঁপতে থাকেন। ভীষণ জ্বরে তিনি আক্রান্ত হন। চিরুতার পাতা ভিজিয়ে মা তাঁর মুখে দু’তিন বার পানি দেন।

শেষ রাতে মা আমাদের সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে পিতার সামনে বসান। পিতার কম্পিত গরম হাতখানা মা একে একে আমাদের মাথায় তুলে দেন। পিতা আমাদের সবার মাথায় হাত বুলান। অতঃপর মাকে বলেন, “রহিমা, প্রাণপণ চেষ্টা করেও চালা বেড়া মেরামত করতে পারলাম না। উহ্ সামনে বর্ষা মৌসুমে বাচ্চাদের নিয়ে তুমি কিভাবে পাড়ি দেবে! কলিম কবিরাজের এক শত টাকা ঋণ। আমগাছটা বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করবে।
আহ্ কাফনের জন্য একটি পয়সাও রেখে যাইনি। তোমার হাতে একখানি চুড়িও নেই। আল্লাহ তা’য়ালার হাতে তোমাদের সোপর্দ করলাম।”

চলবে……………………

গ্রন্থঃ “বালাই হাওরের কান্না”

এই বিভাগের আরো সংবাদ
shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.