Main Menu

আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত উপাচার্য-ট্রেজারার, ঢাকায় বসে নিচ্ছেন বেতন

কোনও ধরনের ছুটি ছাড়া গত ৫ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার। ঢাকায় বসে নিচ্ছেন বেতন-ভাতা তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অনিয়মিত উপস্থিতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অনেক অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক এই মহাপরিচালক গত বছরের ১ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে কোনও ধরনের ছুটি ছাড়া গত ৫ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। পরে নাম বদলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ৫ আগস্টের পর আবারো সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম না থাকলে বারবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দায়িত্বশীলদের নিয়োগ-বাণিজ্য আর হামলা-মামলা খেলায় মুখথুবড়ে পড়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরীক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান থাকলেও অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে উপাচার্য এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ও ট্রেজারার শাহ আলম কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন ঢাকায় বসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিরাজ করছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সিন্ডিকেট সদস্য জানিয়েছেন, গত ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মিজ নুরজাহান বেগমের সিলেট সফরকালীন সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা হয়। এ সময় উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা সমাধানসহ নতুন ভিসি নিয়োগের ব্যাপারে আশ্বাস দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তনের জন্য গত বছরের ১৯ নভেম্বর ১১তম সিন্ডিকেট সভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পুনরায় নামকরণ করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শাহ আলমকে গত বছরের ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে চার বছরের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৯১৯ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভিসিকে বেতন দেওয়া হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। পরে তা সব মিলিয়ে বেড়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন কর্মকর্তা জানান, এটি দেশের চতুর্থ সরকারি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যের মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এনায়েত হোসেন। কয়েক মাস না যেতেই অনিয়মিত উপস্থিতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অনেক অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকা অবস্থায় এনায়েত হোসেন ইউজিসির নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপটে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে সিলেট ও ঢাকায় নিয়মিত রোগী দেখতেন। বর্তমানে কর্মস্থলে না আসলেও সিলেটে গোপনে চেম্বারে রোগী দেখেন। পাশাপাশি ৮ থেকে ১০ জন রোগী একত্রিত করে দিন নির্ধারিত করে সিলেটে এসে গোপনে রোগীদের চোখের অপারেশন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্য ও ট্রেজারার ৫ আগস্টের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য আমরা খুবই কষ্ট করে কার্যক্রম চলমান রেখেছি। তবে প্রশাসনিকসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থেকে ভিসি ও ট্রেজারার কয়েক মাস ধরে অনুপস্থিত। তাদের জন্য অনেক কাজই থমকে আছে। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কোনও রকম পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান রেখেছি। এ ছাড়া অবকাঠামোগত কাজ থমকে আছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক জানিয়েছেন, উপাচার্য হিসেবে এনায়েত হোসেনের সিলেটে সার্বক্ষণিক অবস্থানের বিধান থাকলেও সপ্তাহে তিন-চার দিন ঢাকায় থাকেন। গত বছরের বেশিরভাগ সপ্তাহে মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেছেন। বাকি দিন ঢাকায় চেম্বারে রোগী দেখেছেন। এর বাইরে যখন সিলেটে অবস্থান করেন তখন এখানেও চেম্বারে রোগী দেখেন। এনায়েত হোসেন ঢাকার একটি হাসপাতালে, সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার কম্পিউটার অপটিক এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পাঠানপাড়া এলাকায় ইনক্লুসিভ আই হসপিটালে রোগী দেখেন। উপাচার্য থাকা অবস্থায় এভাবে তার চেম্বার করার বিষয়টি অনৈতিক।

গত ৭ নভেম্বর এনায়েত হোসেন ক্যাম্পাসে আসলে তাকে অবরুদ্ধ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনের মুখে সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে ১৫ দিনের মধ্যে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। এরপর থেকে কর্মস্থলে আসছেন না।

এসব ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ও ট্রেজারার শাহ আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও উত্তর দেননি।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.