Main Menu

প্রবারণা পূর্ণিমা আজ, সন্ধ্যায় উড়বে ফানুস

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর)। ‘প্রবারণা’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। ব্যাপক অর্থে প্রবারণা বলতে অসত্য ও অকুশল কর্মকে বর্জন করে সত্য ও কুশল কর্মকে বরণ করা। প্রবারণা পূর্ণিমার অপর নাম ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’। প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এই পূর্ণিমা তিথি সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন।

এই তিন মাস তারা বিহারে অবস্থান করেন। যেহেতু একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে পরস্পরের মধ্যে ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক, সেহেতু ভিক্ষুদের মাঝেও ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই বর্ষাব্রত পালন শেষে ভিক্ষুরা আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা করেন। অর্থাৎ এই দিনে ভিক্ষুরা পরস্পরের কাছে তাদের পূর্বকৃত ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যার মাধ্যমে বুদ্ধের শাসনের উৎকর্ষ সাধিত হয় এবং ভিক্ষুসংঘের কল্যাণ সাধিত হয়। ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তির এই পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য একটি আবশ্যক বিধিবদ্ধ নিয়ম।

প্রবারণা পূর্ণিমার পরদিন থেকে পরবর্তী এক মাস অর্থাৎ কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হয়ে থাকে। বর্ষাবাস সমাপ্তকারী ভিক্ষুরা কঠিন চীবর গ্রহণ করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার পবিত্র দিনে বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা পরিষ্কার পোশাকে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হয়ে বুদ্ধপূজা করেন, ভিক্ষুদের আহার্য দান করেন, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করেন এবং বিকালে ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়।

এই পবিত্র দিনের আকর্ষণীয় একটি দিক হলো সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানোর উৎসব। সর্বস্তরের মানুষ ফানুস ওড়ানো উপভোগ করে। ফানুস মূলত ওড়ানো হয় বুদ্ধের কেশ ধাতুর প্রতি পূজা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে।

প্রবারণা পূর্ণিমার তিথি আজ রাত ৯টা ১২ মিনিটে শুরু হবে এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল ৫টা ২৬ মিনিটে শেষ হবে। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিন ভিক্ষুসংঘের প্রাতরাশ, শীল গ্রহণ ও বুদ্ধ পূজা, ভিক্ষু সংঘের প্লিদান, আলোচনা সভা, ফানুস ওড়ানোসহ নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠিত হবে।

বিকালে এই তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত দিবসটি যথাযথ আড়ম্বরপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে উদ্‌যাপনের জন্য বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিসহ ‘মহামানব গৌতম বুদ্ধের অহিংসা, সাম্যবাদ, মানবতাবাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বৌদ্ধধর্মের ভূমিকা’ শীর্ষক সদ্ধর্ম আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ সদ্ধর্মকাণ্ডারী শ্রীমৎ ধর্মমিত্র মহাথের।

এছাড়া অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে আছে— জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসংঘের প্রভাতি পিন্ড গ্রহণ, বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, অষ্টউপকরণসহ মহাসংঘদান, ভিক্ষুসংঘের পিণ্ডদান ও অষ্টশীল গ্রহণকারীদের মধ্যাহ্ন ভোজন, আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যাহ্ন ভোজন, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ, প্রদীপ পূজা ও আলোকসজ্জা এবং সন্ধ্যায় বর্ণাঢ্য ফানুস উৎসব।

এদিকে আজ তিন পার্বত্য জেলায় প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটিসহ সব বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা উৎসব উপলক্ষে বৌদ্ধ মূর্তি দান, সংঘদান, হাজার বাতি দানসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। সন্ধ্যায় ফানুস বাতি উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে প্রবারণা উৎসব শেষ হবে। ১৮ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপী তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভিক্ষু সংঘের সিদ্ধান্তে তা হচ্ছে না।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.