এক সপ্তাহের নেপাল ভ্রমণ শেষে সোমবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন নোয়াখালীর ইউসুফ হোসেন। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে অবতরণের পর ২টা ৩০ মিনিটে তিনি তার লাগেজ হাতে পান। এর ১০ মিনিট পর তিনি ‘ক্যানোপি ১’ দিয়ে বাইরে চলে আসেন।
‘এ যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার!’ ক্যানোপির বাইরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এমন আশ্চর্য হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করেন ইউসুফ। বলেন, ‘এর আগে বহুবার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছি। কিন্তু এ রকম দ্রুততার সঙ্গে লাগেজ কোনও দিনই আসেনি। এ ছাড়া ভেতরের কর্মকর্তাদের ব্যবহারও যেন অবাক করার মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যার ছাড়া কথাই বলছেন না কেউ। শাহজালালের ভেতরের সেবা এ রকম বদলে যেতে পারে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। আগে লাগেজ পেতে দেরি কিংবা ট্রলি ব্যাগ এমনভাবেই ছুড়ে মারতো, সেটি প্রায় নষ্ট হয়ে যেতো, এগুলোর কিছুই নেই।’
বিমানবন্দরে ‘স্যার’ ডাক শুনে উচ্ছ্বসিত প্রবাসীরা
‘কর্মকর্তারা কিন্তু বদলাননি, তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। শুধু মন-মানসিকতার পরিবর্তনেই এত বদল হয়ে গেছে ভেতরের সেবা?’ এমনটা মনে করে তিনি আরও বলেন, ‘এ সেবা অব্যাহত থাকলে প্রবাসীরাও খুশি হবে। কর্মকর্তাদের নামে যে বদনাম, সেটিও দূর হবে’- এমনটাই মনে করেন ইউসুফ।
সোমবার সরেজমিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের সেবাপ্রাপ্তির এমন চিত্রই দেখা গেছে। আরও দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত যাত্রীদের সে রকম চাপ না থাকলেও যারাই আসছেন, সেবা পেয়ে তাদের মুখে হাসি। লাগেজ বিড়ম্বনা কিংবা লাগেজ থেকে কিছু চুরি যাওয়া বা কাটাকাটির ভয় ছিল না তাদের।
তিন বছর পর ওমান থেকে আসেন শরীয়তপুরের আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় তিন বছর পর দেশে এলাম। যাওয়ার সময়ও এক ধরনের ঝামেলা ছিল। কিন্তু এখন আসার পর সবাই ভালোভাবে সম্মান করলো। অনেকে স্যার স্যার বলেই সম্বোধন করলো। খুবই ভালো লাগছে বহুদিন পর এসব দেখে।’
বিমানবন্দরে ‘স্যার’ ডাক শুনে উচ্ছ্বসিত প্রবাসীরা
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবাসীরা কী চাই? এতটুকুই তো! বিমানবন্দরে যেন আমাদের আর কেউ হয়রানি না করেন। আমরা সহজেই যেন বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারি। আমাদের মালামাল যেন চুরি না হয়। এটাই চাওয়া আমাদের। সেই সেবাটাই এখন মিলছে। আমরা এতে খুব খুশি।’
দেশে আসা প্রবাসী জারিফ বলেন, ‘আমরা এমন সেবাই তো চেয়েছিলাম। আমাদের কেউ যেন হয়রানি না করেন। একজন প্রবাসী দীর্ঘদিন পর দেশে আসেন। অথচ বিমানবন্দরে লাগেজ পেতে কত সমস্যা পোহাতে হয়। অনেক সময় লাগেজ চুরি হয়। সব মিলিয়ে প্রবাসীদের একরকম টেনশনে থাকতে হতো। কিন্তু আজ আসার পর আগের চিত্র নেই। আমরা খুব সহজেই লাগেজও পেলাম, আবার বের হয়েও আসতে পেরেছি। আমরা এখন খুব খুশি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাত্রীরা যেন কোনও হয়রানি না হন, সে জন্য কড়া নির্দেশনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি যাত্রীরা যেন সহজেই তাদের লাগেজ পান, সে ব্যাপারেও দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা।
বিমানবন্দরে ‘স্যার’ ডাক শুনে উচ্ছ্বসিত প্রবাসীরা
এসব কারণে দেশের সবচেয়ে বড় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের চেহারা বদলে গেছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর সদস্যরাও কঠোরভাবে সবকিছু মনিটর করছেন, যেন কোনও অসুবিধা না হয়।
পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবসময় যাত্রীদের উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এতদিন লাগেজ দেরি করে পাওয়ার যে প্রবণতা ছিল, সেটি এখন অনেক কমে গেছে। এক কথায় নেই বললেই চলে। দায়িত্বরত সবাইকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
কর্মকর্তারাও খুশি জানিয়ে এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যাত্রীর সন্তুষ্টিই আমাদের সন্তুষ্টি। বর্তমানে সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের যে অভিব্যক্তি, এতে আমরাও খুশি। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’