Main Menu

২০ হাজার টাকায় দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা নৌকায় চড়ে টেকনাফ সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন জেলার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে। গত এক মাসে সীমান্তের অন্তত ২০টি পয়েন্ট দিয়ে ১০-১২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এসব রোহিঙ্গার প্রত্যেককে গুনতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত সাত-আট দিনে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মংডু সীমান্তে জড়ো হয়েছেন আরও ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা। নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের চলমান যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই চলছে। মংডু টাউনে থাকা সেনা ও বিজিপির দুটি ব্যারাক (ব্যাটালিয়ন) দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। গোলাগুলির পাশাপাশি দুই পক্ষ থেকে ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেল, গ্রেনেড-বোমা। চালানো হচ্ছে ড্রোন হামলা। এ অবস্থায় সহিংসতা থেকে বাঁচতে ওপারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। এর মধ্যে গত এক মাসে ১০-১২ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

নতুন করে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে মংডু ও আশপাশের এলাকায় তুমুল যুদ্ধ চলছে। এতে অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন। আহতদের কেউ কেউ চিকিৎসা ও প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসছেন। এ কারণে প্রতিজন রোহিঙ্গাকে দালালদের ২০ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।

দুদিন আগে টেকনাফ ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মো. আরজ বলেন, ‘এখন মিয়ানমারের মংডু ও আশপাশের এলাকাগুলোতে আরকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। এতে নিহত হয়েছ্নে অনেকে। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। বাধ্য হয়ে দালালের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি।’

আরেক রোহিঙ্গা যুবক রিদুয়ান বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে অনেক কষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখানে নেই কোনও খাবার। আমার যে আত্মীয়ের বাসায় আছি, তারাও ঠিক মতো খেতে পারছেন না।’

একই ক্যাম্পে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ রোহিঙ্গা নারী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘রাখাইনে সহিংস ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছি। মনে হচ্ছিল আমি মরে গেছি। কিন্তু আমার ছেলেরা অজ্ঞান অবস্থায় সীমান্ত পার করে দিয়ে গেছে।’

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মো. ইউনুচ আরমান বলেন, ‘মিয়ানমারে ব্যাপক সহিংস ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন সীমান্তে। এখন যেসব রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করছেন, তাদের দ্রুত খাদ্য ও পুনর্বাসন করা হোক। অনেকে অসুস্থ অবস্থায় এসেছেন।’

রোহিঙ্গাদের অধিকার সংগঠন আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। এতে নতুন করে আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে। রাখাইনের দখল নিয়ে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির যুদ্ধে আবারও রোহিঙ্গারা নির্মূল হচ্ছে। এসব বন্ধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাই আমরা।’

ব্যাপকহারে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাজাপালং ইউনিয়নের মেম্বার হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এমনিতে রোহিঙ্গাদের বোঝা বাংলাদেশকে নিতে হচ্ছে, তার ওপর আবারও রোহিঙ্গা স্থানীয় মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না। তাই সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের আরও কঠোর হতে হবে।’

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রেজাউল করিম বলেন, ‘সোমবার রাতেও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এপারে ভেসে আসে। তবে সোমবার ভোর থেকে তেমন বিকট শব্দ শোনা যায়নি। কয়েকদিন ধরে মংডু ও আশপাশের এলাকায় টানা বিমান হামলা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়েছে।’

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার সামসু-দৌজা নয়ন বলেন, ‘ঠিক কতজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে সে তথ্য নেই। সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সঠিক তথ্য দিতে পারবে। তবে এপারে যেভাবে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে, এতে মনে করতে পারি ওপারে তুমুল যুদ্ধ চলছে।’

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.