বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা ও নৃশংসতার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই ভুগছেন তীব্র উদ্বিগ্নতা, ঘুমের সমস্যাসহ নানা মানসিক অস্থিরতায়। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠেন এখনও। চিকিৎসা না করালে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ও মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে নির্বিচার গুলিবর্ষণ থেকে শুরু নানা নৃশংসতার আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বিভীষিকাময় পরিস্থিতির শিকার হয় অসংখ্য ছাত্র-জনতা। তাঁদেরই একজন মাদারীপুরের নাজিমুদ্দিন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোল্লা। দুই সপ্তাহ ধরে ভর্তি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে। আন্দোলনে চোখের সামনেই দেখেছেন দুই বন্ধুর মৃত্যু।
ফয়সালের বাবা জানান, তাঁর ছেলে এখন আগের চেয়ে বেশি কথা বলে। কিছু হলেই বাবা-মাকে মারধর করতে যায়।
ফয়সালের মতোই অস্থিরতাসহ মানসিক অবসাদে ভোগা কয়েকজন চিকিৎসা নিচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী, আইনজীবী, চিকিৎসক।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, ‘বুলেট লেগে আমার চোখের সামনেই একজন মারা যান। এরপর মেডিকেলে গিয়ে দেখছি অক্সিজেন নাই, এই নাই সেই নাই। এখন মাঝেমধ্যে আমি কল্পনা করি, সেখানে তো আমিও থাকতে পারতাম। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করে আমি যখন ঘুমাতে যাই তখন আমার অনেক সমস্যা হয়।’
শুধু প্রত্যক্ষদর্শী নয়, যারা টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নৃশংসতার ভিডিও দেখেছেন, তাঁদের মনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, যারা নৃশংসতা দেখেছেন তারা তীব্র মানসিক চাপে ভুগছেন। দ্রুত চিকিৎসা না করলে দেখা দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ডা. সফিকুল কবীর জুয়েল বলেন, ‘আমরা যদি মানসিক অস্থিরতায় থাকা শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হই তাহলে তাদের মধ্যে মানসিক বৈকল্য তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এটা হবেই। আর প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্নতা তৈরি হতে পারে।’