‘রক্তবীজ’ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। ‘মিতিন মাসির’ জঙ্গল, ‘বাঘাযতীনের’ বীরগাথা, ‘দশম অবতারের’ থ্রিলার এবং প্রেম। বাংলা ছবি কী পথে ঘুরে দাঁড়াতে চায়? প্রশ্ন তুললো আনন্দবাজার অনলাইন।
অবশেষে বীজ পত্তন হয়ে গেল। রক্ত? নাকি মঙ্গলের! তার বিচার এর মধ্যেই করতে শুরু করেছেন দর্শক। এই ছবির বিশেষ প্রদর্শনের সন্ধ্যা অবশ্য ছিল অন্য রকম। কিছুদিন আগেই মেয়ে চলে গিয়েছেন তবুও ‘রক্তবীজ’ দেখতে হাজির দীপঙ্কর দে, দোলন রায়। পরিচালক শিবপ্রসাদকে বললেন, ‘‘ইনসুলিন নিতে হবে পুরো ছবি দেখতে পারব না কিন্তু।’’
কী হল তারপর? ছবির শেষে দেখা গেল তিনি আর দোলন রায় ওই পরিচালকের দিকেই এগিয়ে আসছেন। তা হলে ইনসুলিন? দীপঙ্কর বললেন, ‘‘এত টান টান চিত্রনাট্য, এ রকম ক্লাই ম্যাক্স ইনসুলিনের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।’’
১৮ই অক্টোবর প্রিমিয়ার। প্রযোজনা সংস্থার সকলেই থিম ‘রক্তবীজ’ য়ে হাজির। রং লাল কালো। ‘‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি ছবির পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায় একে বারে প্রেক্ষাগৃহের সামনে। সে দিন তিনি অভ্যর্থনায়। পাল্টে নিয়েছেন ভূমিকা। পরিচালক নন্দিতা রায় জমকালো লাল কালো শাড়িতে থেকে থেকেই অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন অতিথিদের। তাঁর হাসি বলে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের কথা।
অন্য দিকে লাল কাজ করা কালো পাঞ্জাবিতে আরেক পরিচালক খানিক উত্তেজিত মুখে। চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। তাঁর মোবাইলে ফোন আসছে। ফোনের ও পারের কণ্ঠস্বর জানতে চাইছে, ‘‘আগের শো হাউসফুল তো?’’ কণ্ঠের নাম মিমি চক্রবর্তী। ওরফে ছবির সংযুক্তা (ছবিতে আবীর চট্টোপাধ্যায় এই নামেই মিমিকে ডাকতেন)।
সকলেই তো আছেন। কিন্তু জিনিয়া সেন কই? তিনি যৌথভাবে শর্বরী ঘোষালের সঙ্গে এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। মুখে কথা নেই জিনিয়ার। কথা নেই শিবপ্রসাদের সঙ্গেও। এ কি ঘটালো ‘রক্তবীজ’!
পরিচালক প্রভাত রায় এর মধ্যেই নন্দনে ‘রক্তবীজ’ দেখে ফেলেছেন। শিবপ্রসাদকে বলেছেন, ‘‘বাড়িতে সর্ষের তেল আছে? নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে। ছবি নিয়ে চিন্তা না করতে!’’
বার্তা এসেছে ফোনে ‘রক্তবীজ’ য়ের রাষ্ট্রপতির। তিনি ভিক্টর বন্দোপাধ্যায়। ভিক্টর লিখেছেন, ‘‘মা দুর্গা কখনওই তোমার এই ভাল কাজ অবহেলা করবেন না। মা সরস্বতী তোমায় আশীর্বাদ করবেন। মা লক্ষী তোমার ঘরে বিরাজ করবেন। আমি সর্বতোভাবে তোমার সাফল্য কামনা করি।’’
মুম্বাইতে ‘রক্তবীজ’ দেখে ফেলেছেন গায়ক প্রীতম চক্রবর্তীর মা। ছবি শেষ। আবীর, মিমি থেকে শুরু করে খলনায়ক দেবাশিস সবাই হাজির প্রিমিয়ারে। নীল রঙা পাঞ্জাবি আবীরের পাশে হাজির তাঁর স্ত্রী নন্দিনী। তাঁর লাল কালো শাড়িও জানান দিচ্ছে তিনি ‘রক্তবীজ’য়ের সঙ্গে। মিমি স্লিভলেস মেরুন ব্লাউজ। মেরুন জড়ির ভারী সিল্কে চতুর্থীর পুজো সাজে। এই মিমিই পুলিশের অধিকর্তা হয়ে অপরাধীর উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েছেন? ভাবতে বেশ লাগে। ‘থ্রিলারের থ্রিল’ বেড়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় আসায়। সমাজ মাধ্যমে ছবি নিয়ে লিখেছেন পরিচালক, ‘‘রক্তবীজ দেখলাম কাল। নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদের পরিচালক জুটির সেরা ছবিটি দেখলাম। অভিনয়, ক্যামেরা, আবহ সঙ্গীত, আর্ট, পোশাক, অ্যাকশন সব বিভাগই যত্নে ভরপুর।’’
‘রক্তবীজ’ ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। ‘মিতিন মাসির’ জঙ্গল, ‘বাঘাযতীনের’ বীরগাথা, ‘দশম অবতারের’ থ্রিলার এবং প্রেম। সব কিছুকে ছাপিয়ে স্কোর বোর্ডে সর্বচ্চ রান তুলবে? শেষ কথা বলবেন দর্শক। তাদের মুখেই জগত (পড়ুন ছবি) ফেরে।
তবে প্রিমিয়ারের শেষে জিনিয়ার মুখে হাসি। তিনি শিবপ্রসাদের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাহী সম্পাদক