Home » ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের ট্র্যাজেডি

ওসমানীনগরে প্রবাসী পরিবারের ট্র্যাজেডি

যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছিল পাঁচ সদস্যের পরিবার। বাবা-মায়ের সাথে ছিল একমাত্র মেয়ে আর দুই ছেলে। চিকিৎসা গ্রহণ, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আর ঘুরে বেড়ানো এই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু সিলেটে আসার পর অবিশ্বাস্য এক ট্রাজেডির শিকার হয়ে এখন এলোমেলো এই পরিবারের সবকিছু। ‘অজানা এক রহস্যে’ মৃত্যু হয়েছে বাবা, এক ছেলে আর একমাত্র মেয়ের। তিন সপ্তাহেও সেই রহস্যের কোনো ক‚লকিনারা হয়নি। ফলে অজানাই রয়ে গেছে প্রবাসী পরিবারটির তিন সদস্যের মৃত্যুর কারণ। ময়নাতদন্ত ও রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো না পাওয়ায় মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে সঠিক করে কিছু বলতে পারছে না আইনশৃৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গত ১২ জুলাই এসেছিলেন দেশে। তারা ঢাকায় অবস্থান করেন এক সপ্তাহ। এরপর ১৮ জুলাই সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর স্কুল রোডের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। সব চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় ২৫ জুলাই রাতে। সেদিন রাতের খাবার খেয়ে একটি কক্ষে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঘুমোতে যান রফিকুল। অপর দুটি কক্ষে ছিলেন তাদের স্বজনরা। ২৬ জুলাই সকালে রফিকুল ইসলামদের সাড়াশব্দ না পেয়ে স্বজনরা ‘৯৯৯’-এ কল করেন। পরে ওসমানীনগর থানা পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারটির পাঁচ সদস্যকে। দ্রæত তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকি তিনজনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ৩ আগস্ট মা হোসনে আরা ও ছেলে সাদিকুল ইসলাম হাসপাতাল ছাড়েন। দুদিন পর ৫ আগস্ট মারা যান মেয়ে সামিরা ইসলাম।

প্রবাসী পরিবারের এই ট্রাজেডি নিয়ে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়। এটা পরিকল্পিত খুন কি-না, সেই প্রশ্নও ওঠে। সন্দেহের তীর যায় স্বজনদের দিকে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে সন্দেহজনক কিছু পায়নি পুলিশ। পরে খাবারের বিষক্রিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে কিনা, সেদিকে নজর দেয় পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুলাই রাতে ওই প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা যেসব খাবার গ্রহণ করেছিলেন, সেগুলোর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। কিন্তু গতকাল সোমবার অবধি পরীক্ষার প্রতিবেদন পায়নি পুলিশ। রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও গতকাল সোমবার পর্যন্ত হাতে পায়নি পুলিশ।

এদিকে, গত ৩ আগস্ট প্রবাসী হোসনে আরা বেগম ও তার ছেলে সাদিকুল ইসলাম হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তাদের সাথে কথা বলেন সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন। তাদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, লোডশেডিংয়ের সময় বাসায় জেনারেটর চালানো হতো। জেনারেটর চালুর পর তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। এ তথ্য জানার পর পুলিশও জেনারেটর চালু করে পরিস্থিতি অবলোকন করে। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরাও তখন অস্বস্তি অনুভব করেন। পুলিশ ধারণা করছে, ঘটনার রাতে জেনারেটর দীর্ঘ সময় চালু থাকায় এর ধোঁয়া শ্বাসের সাথে ফুসফুসে চলে যায়। ফলে দমবন্ধ হয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়েন।

এ বিষয়ে সিলেটের পুলিশ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী পরিবারের ট্রাজেডি রহস্য উদ্ঘটানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাদের মৃত্যুর জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তবে প্রকৃত কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে। এছাড়া খাবারে বিষক্রিয়া হয়েছে কিনা সেজন্য রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রয়োজন। কোনো প্রতিবেদনই আমরা পাইনি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এগুলো পাওয়ার আশা করছি আমরা।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *