Home » ডেঙ্গু জ্বর, নাকি করোনা পজিটিভ—কীভাবে বুঝবেন

ডেঙ্গু জ্বর, নাকি করোনা পজিটিভ—কীভাবে বুঝবেন

কোভিড আর ডেঙ্গু হাতে হাত রেখে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তাই করোনার সময় যদি তীব্র জ্বর ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন, ডেঙ্গুর কথা ভুলে যাবেন না। বর্ষায় ঢাকাসহ বড় বড় শহরের জলাবদ্ধতায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। কেননা, জমাটবদ্ধ পানি এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য সেরা জায়গা। জেনে নেওয়া যাক করোনা আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মিল–অমিল।

* করোনা আর ডেঙ্গু—দুটিই মূলত ভাইরাসজনিত জ্বর (ভাইরাল ফিভার)। দেড় বছর ধরে চলছে করোনাকাল। আর বর্ষা মৌসুমে বাড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আর এবারের বর্ষায় যেন ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিদিন করোনা ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শত শত মানুষ। জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরে ব্যথার মতো লক্ষণ থাকলে আপনার করোনা বা ডেঙ্গু অথবা করোনা ও ডেঙ্গু—দুটিই হতে পারে।

* কোভিড ও ডেঙ্গু—দুই ধরনের সংক্রমণেই জ্বর থাকবে। জ্বরের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, ক্ষুধামান্দ্যর মতো প্রাথমিক উপসর্গ থাকে দুটিতেই। করোনা বারবার ধরন পাল্টাচ্ছে, তাই উপসর্গও বদলে যাচ্ছে। কখনো তীব্র অরুচি আর স্বাদহীনতা প্রকট হয়ে দেখা দেয়। কখনো উপসর্গ বলতে কেবল ডায়রিয়া আর জ্বর। কখনোবা কেবল মাথাব্যথা। করোনায় অনেকে ঘ্রাণ পায় না। ডেঙ্গু জ্বরে ঘ্রাণ থাকবে।

* তবে করোনায় এখনো জ্বরের সঙ্গে শরীরে ফুসকুড়ি আর দাঁত-নাক বা অন্য জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হয়নি। রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে; এটাও কেবল ডেঙ্গুতেই হয়। আবার দ্রুত অক্সিজেনের লেভেল কমে যাওয়া ও শ্বাসকষ্ট হওয়া করোনার প্রকট লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। ডেঙ্গুতে এসব লক্ষণ বিরল। হয় না বললেই চলে।

* করোনার টিকা থাকলেও ডেঙ্গুর কোনো টিকা নেই। যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের, তাই একই সঙ্গে চারটি ভাইরাসের প্রতিরোধে কাজ করে—এমন টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।

* সাধারণ লক্ষণগুলো থাকলেই সবার আগে করোনা আর ডেঙ্গু—দুটিরই পরীক্ষা করাতে হবে। চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে মূলত দুই ধরনের জ্বর হয়। ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ফিভার। ডেঙ্গু জ্বর অন্যান্য ভাইরাল ফিভারের মতো নিজে থেকেই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর ভয়াবহ হতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। চরম বিষাদগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে। অরুচি, বমি বমি ভাব এবং ত্বক লাল হতে পারে। এ জ্বর ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। শরীরের চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ত্বকে রক্তক্ষরণজনিত উপসর্গ দেখা যায়।

* ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও এ সময় প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রচুর তরল খাবার খাওয়া উচিত। জ্বর কমানোর জন্য কোনোমতেই প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ খাওয়া যাবে না। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড়ে বারবার শরীর মুছে দিতে হবে।

নানান উপায়ে এড়িয়ে চলুন ডেঙ্গুকে
গোদের ওপর বিষফোড়া বলে যে একটা বাগধারা আছে, এমন সময়ে ব্যাখ্যা করার জন্য সেটি একদম ঠিকঠাক। একে তো চলছে মহামারিকাল, বিধিনিষেধ; প্রায় প্রতিদিনই ঢাকায় গড়ে দেড় শ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে। বিশেষ করে শহরের দিকে বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এখন তাই করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে লড়তে হবে ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্যও। জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু এড়িয়ে চলার সহজ কিছু উপায়।

ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে:
১. ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই। নিজের আবাসস্থল, কর্মস্থান পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখুন। মহামারিকালের বিধিনিষেধে অনেকেই ঘরে বারান্দায় বাগান করেছেন। সেসব টব বা বোতলের জমা পানি ডেঙ্গুর প্রিয় আবাসস্থল। তাই দুদিন পরপর সব জমা পানি ফেলে দিন।

২. বাথরুমের বালতি, গামলা, মগেও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন। বাসা বন্ধ রেখে অন্য কোথাও গেলে বালতি, গামলা, জগ, মগ, টব, ডাবের খোল, ফেলে রাখা টায়ার, যেকোনো পরিত্যক্ত টায়ারে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সেগুলো উপুড় করে রেখে যেতে পারেন। তাতে অন্যান্য ময়লাও ঢুকবে না। অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনারের নিচে, মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

৩. নিজের অ্যাপার্টমেন্টে, এলাকায় বা পাড়ায় কমিটি করে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। মশার ওষুধ ও লার্ভিসাইড ছিটাতে হবে।

৪. সূর্যোদয়ের পরের আধা ঘণ্টার আর সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আগের আধা ঘণ্টা, এই দুই সময়ে এডিস মশা খাবারের জন্য সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়। তাই এই দুই সময়ে বেশি সাবধানে থাকতে হবে।

৫. ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। রোগীকে সব সময় মশারির মধ্যে রাখা ভালো। কেননা, এই রোগীকে যদি সাধারণ মশাও কামড়ায়, সে–ও ডেঙ্গুর বাহক হয়ে যাবে। ফলে, ওই মশা আবার যাকেই কামড়াবে, সে–ই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবে।

৬. মশার প্রথম টার্গেট হলো হাত আর পা। তাই হাত পা ঢেকে রাখে, এমন পোশাক পরুন। বাচ্চাদের যথাসম্ভব লম্বা জামাকাপড় পরাতে হবে। ফুলহাতা শার্ট, গেঞ্জি বা জামা, ফুলপ্যান্ট, পায়জামা পরাতে হবে। শরীরের খোলা জায়গায় মশা প্রতিরোধক ক্রিম লাগানো যেতে পারে।

৭. ময়লা রাখার পাত্র প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। সেটিও নাগরিক জীবনে এডিস মশার আরেকটি প্রিয় স্থান। ব্যবহারের পর ময়লার পাত্রের মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়া ঘরের কোনা, ছায়াময় স্থান, একটু স্যাঁতসেঁতে জায়গা, রান্নাঘরের বেসিন বা বাথরুম নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।

৮. বর্ষার মৌসুমে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। আর জানালা খোলা রাখলেও নেট দিয়ে রাখতে ভুলবেন না। এ ছাড়া ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশা থেকে বাঁচতে দিন ও রাতে সব সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর মশার কয়েল কিংবা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

সূত্র: প্রথম আলো

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *