Home » মাকে গোয়ালঘরে বেঁধে নির্যাতন

মাকে গোয়ালঘরে বেঁধে নির্যাতন

অনলাইন ডেস্ক : জমি লিখে না দেয়ায় বৃদ্ধা মাকে গোয়ালঘরে বেঁধে নির্যাতন করেছে ছেলে সবুজ মিয়া ও পুত্রবধূ সাহেদা খাতুন। এতে বৃদ্ধা মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দার বড়খাপন ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা মা ফসর বানুর (৮৫) শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, কলমাকান্দা উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের আমজাদ আলী ও তার স্ত্রী ফসর বানুর জমি ২০১১ ও ২০১৬ সালে একটি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখল করে নেয় ছেলে সবুজ মিয়া। এ ব্যাপারে ফসর বানু বাদী হয়ে দুর্গাপুর জজ আদালতে দলিল বাতিল চেয়ে মামলা করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার ওপর ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতন।

নির্যাতনের শিকার ফসর বানু জানান, তার স্বামী আমজাদ আলী প্রায় ১০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে। তারা হলেন- আবদুল হান্নান, আক্কাছ আলী, সবুজ মিয়া ও মেয়ে রহিমা খাতুন, আফরোজা আক্তার, মিনা আক্তার, স্বপ্না আক্তার এবং শাবানা আক্তার।

তিনি বলেন, মেয়ে মিনা আক্তার তার ভাই সবুজের কাছে পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করলে সবুজ আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। পাশপাশি সবুজ আমার জমির বাকি অংশটুকুও লিখে নিতে চায়। জমি লিখে দিতে না চাইলে আমাকে মারধর করে ছেলে সবুজ। একপর্যায়ে সবুজ ও তার স্ত্রী সাহেদা আক্তার আমাকে গোয়ালঘরে বেঁধে মারধর করে। আমার বয়স্কভাতার কার্ড নিয়ে গেছে তারা। ওই কার্ডের টাকা উত্তোলন করে নেয় সবুজ ও তার বউ।

সর্বশেষ গত রোববার মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেত দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে ছেলে ও পুত্রবধূ। প্রতিবেশীরা বৃদ্ধাকে রক্ষা করতে এলে তাদের খুনের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয় তারা। বৃদ্ধার মেয়েরা খবর পেয়ে মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাতে চাইলেও হাসপাতালে নিতে দেয়নি সবুজ ও তার স্ত্রী সাহেদা।

প্রতিবেশী জরিনা খাতুন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে জমি-সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। এ নিয়ে মাকে প্রায়ই মারপিট করে। রাতে গোয়ালঘরে তালাবদ্ধ করে সকালে তালা খুলে দেয় সবুজ। এ ব্যাপারে শুধু জরিনাই নয় গ্রামের অনেকেই এই নির্যাতনের কথা তুলে ধরে সবুজের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

বড়খাপন ইউপি সদস্য মঞ্জুরুল হক বলেন, বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সবুজ এলাকার কোনো মানুষকেই তোয়াক্কা করছে না। ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে ওই বৃদ্ধা মায়ের নির্যাতনের কথা এলাকার সবার জানা।

ফসর বানুর বড় ছেলে আবদুল হান্নান বলেন, আমরা তিন ভাই, পাঁচ বোন। বসতবাড়িসহ ৬৬ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। তার মধ্যে ছোট ভাই সবুজ বিভিন্ন কৌশলে দলিল করে বাড়িসহ ৪২ শতাংশ জমি দখল নেয়ার চেষ্টায় আছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মারপিট করে। কিছুদিন আগে মায়ের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় আমার পরিবার সাজেদা খাতুনকে মারপিট করে হাত ভেঙে দেয় সবুজ ও তার স্ত্রী।

ফসর বানুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জমির লাইগ্যা ওরা আমারে মারধর করছে। গরুর ঘরে বাইন্দা রাখছে। ছেলে ও পুত্রবধূ আমারে মারে। কাকে জানাবো এমন লজ্জার কথা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ছেলে সবুজ মিয়া তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমরা খতিয়ে দেখছি। সবুজ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার মা ফসর বানুর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *