Main Menu

এবার চাকরি হারানোর আতঙ্কে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা

শিক্ষকদের বেতন নিশ্চিত না করলে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে’— জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন নোটিশে চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন এই স্তরের সাড়ে চার হাজার শিক্ষক। তারা বলছেন, চাকরি না থাকলে বেতনের নিশ্চয়তা কি কাজে আসবে?

এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন নিশ্চিত করতে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব কলেজ বেতন দেবে না, তাদের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে। মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির শর্তে বলা ছিল—অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের কলেজ কর্তৃপক্ষ বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। এরপর শর্ত মেনে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অনার্সের কোর্স খোলে। ফলে অধিভুক্তি না থাকলে শিক্ষকদের পদই থাকবে না।

গত ১৩ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শন দফতর থেকে দেশের প্রায় সাড়ে তিনশ’ বেসরকারি কলেজকে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের বেতন দিতে বলা হয়। শিক্ষকদের বেতন না দিলে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। ওই নোটিশনার পর চাকরি হারানোর আতঙ্কে পড়েন বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।

এর আগে বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তর উঠিয়ে দেওয়ার আলোচনায় শিক্ষকরা চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন। নতুন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নোটিশে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও সমস্যা না হলেও এই স্তরের শিক্ষকরা চাকরির অনিশ্চতায় পড়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বেসরকারি কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা যখন বেতনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, তখনই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি দিয়ে কলেজগুলোকে বেতন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু এরপরেও দফায় দফায় শিক্ষকরা আন্দোলন করলেও কলেজগুলো শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে না।

সাত বছর আগে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ চিঠি দেয়। চিঠিতে অনার্স-মাস্টার্স স্তরে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আগে শিক্ষা আইনে অন্তর্ভুক্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু গত সাত বছরেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কোনও সুপারিশ করেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে ২০১৬ সালে এবং করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালে চিঠি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ গত ১৩ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের বেতন না দিলে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্তি বাতিল করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হারুন-অর-রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ১৩ জুন শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বেতনের দাবি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বেতনের দাবি জানালে ওই দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষকে নোটিশটি জারি করা হয়। এই নোটিশের পর থেকে চাকরির আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষকরা।’

বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিল্টন মণ্ডল বলেন, ‘২৯ বছর ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও বেতন-ভাতা দেয়নি, নামমাত্র কিছু সম্মানী দিয়েছে শিক্ষকদের। করোনার সময় সেটাও বন্ধ। দীর্ঘ দিন আন্দোলন করে বেতন দাবি করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষও কোনও সাড়া দেয়নি। কার্যকর পদক্ষেপও নেয়নি। এই প্রথমবার শক্ত পদক্ষেপ হিসেবে নোটিশ করা হলেও তা শিক্ষকদেরকে চাকরির অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অধিভুক্তি বাতিলের ভয়ে বেতন দেবে মনে হয় না। বরং শিক্ষকদের সম্মান বাঁচাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বেতন চাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’

মিল্টন মণ্ডল আরও বলেন, ‘আগে ইচ্ছে করে বেতন দেয়নি বেশিরভাগ কলেজ। আর এখন তো করোনার কারণে কলেজগুলো টিউশন ফি আদায় করতে পরছে না। কলেজগুলো অনার্স-মাস্টার্স স্তরের অধিভুক্তি রক্ষার জন্য শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার কথা ভাবছেও না। উল্টো কোনও কোনও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলছেন এবং নিজেরাও বলাবালি করছেন—‘অধিভুক্তি বাতিল হলে কলেজের কোনও সমস্যা নেই। কারণ, এই স্তর ছাড়া সবাই তো এমপিওভুক্ত শিক্ষক।’ তিনি বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে অধিভুক্তি বাতিলের নোটিশ শিক্ষকদের আতঙ্কিত করেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী, ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত এমপিওভুক্ত কলেজে ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্সের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টার্সের বিষয় অনুমোদন পায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কলেজগুলোর জনবল কাঠামোতে স্থান পায়নি অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পদ। ফলে সরকারি বিধিবিধানের আলোকে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হন তারা। এই পরিস্থিতিতে ২৯ বছর ধরেই বঞ্চিত হচ্ছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.