Main Menu

পরীমণির অভিযোগের সঙ্গে ঘটনার মিল পাচ্ছে না পুলিশ

চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সাভার থানায় যে মামলা হয়েছে, সেই মামলার এজাহারের বর্ণনার সঙ্গে পরীমণির বক্তব্যের মিল পাচ্ছেন না তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণে পরীমণির অভিযোগ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ইতোমধ্যে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে ঢাকা বোট ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পাশাপাশি তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনার দিন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাইবেন পরীমণির কাছেও। তবে প্রাথমিক তদন্তে বোট ক্লাবের ঘটনার সঙ্গে পরীমণির অভিযোগের অনেক কিছু মিলছে না বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ‘আমরা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য যা যা করণীয় সবই করছি। সেই রাতে ক্লাবে কী ঘটেছিল, নিবিড়ভাবে তদন্ত করে আমরা সেই সত্য তুলে আনতে চাই। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য আমরা আদালতে জমা দেবো।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীমণি সাভার থানায় দায়ের করা মামলায় বলেছেন, সেই রাতে পূর্ব পরিচিত অমিসহ কয়েকজন পরিকল্পিতভাবে দুই মিনিটের কাজ আছে বলে পরীমণিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে নিয়ে যান। সেখানে তারা গাড়িতে অপেক্ষা করেন। ছোট বোন বনির প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ায় তারা বারের পাশের একটি টয়লেট ব্যবহার করতে ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু ঢাকা বোট ক্লাবের প্রবেশ পথ ও অভ্যর্থনা কক্ষে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বোট ক্লাবের সামনে গাড়ি এসে থামার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাভাবিকভাবেই পরীমণি ও তার সঙ্গীরা ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরীমণি ক্লাবে প্রবেশ করেন ১২টা ২২ মিনিটে, আর ক্লাব থেকে তাকে ধরাধরি করে বের করা হয় ১টা ৫৯ মিনিটে।

এই এক ঘণ্টা ৩৭ মিনিট ঢাকা বোট ক্লাবের ভেতরে কী করেছেন পরীমণি?

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলছেন, আলোচিত এই ঘটনার পর তারা দ্রুত অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন দুই অভিযুক্ত ও মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামি নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেফতার করেছেন। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে অমি বলেছেন, তারা ক্লাবের ভেতরে গিয়ে নাসির ইউ মাহমুদসহ একসঙ্গে মদ পান করেন। শেষে একটি বোতল নেওয়া নিয়ে প্রথমে একজন কর্মচারীর সঙ্গে পরীমণি বিতণ্ডা করেন। সেই বিতণ্ডায় যোগ দেন নাসির ইউ মাহমুদসহ আরও কয়েকজন।

ঢাকা বোট ক্লাবে যাওয়ার আগে পরীমণির বনানীর বাসায় বসেই এক বোতল মদ পান করেন তারা সবাই। এসময় বাসাতে নাট্যপরিচালক চয়নিকা চৌধুরীও ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অমি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর দুয়েক আগের পরিচয় সূত্র ধরে অমির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছে পরীমণির। পৈত্রিকসূত্রে আদম ব্যবসায়ী তুহিন সিদ্দীকি অমিকে উচ্চবিত্ত সমাজে ‘নারী সাপ্লায়ার’ হিসেবেই চেনে সবাই। দক্ষিণখানে তার বিশাল একটি বাগান বাড়িও রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অমি স্বীকার করেছেন, মদ্যপ অবস্থায় নাসির ইউ মাহমুদ পরীমণিকে কয়েকটি চড় দিয়েছিলেন। এসময় মেঝেতে পড়ে যান পরীমণি। মদ্যপ থাকায় পরীমণিকে তারা ধরাধরি করে গাড়িতে এনে তোলেন। তিনি দুই পক্ষকেই ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেছেন। ঘটনার পর পরীমণিকে একাধিক ক্ষুদেবার্তাও পাঠানো হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে চড় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন নাসির ইউ মাহমুদ।

নাসির ও অমিকে একটি মাদক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের সঙ্গে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তিনজন নারী সঙ্গীকেও। পুলিশ তাদের অমি ও নাসিরের ‘রক্ষিতা’ বলে দাবি করেছে।

ঢাকা বোট ক্লাবের ওই ঘটনায় পরীমণির সঙ্গে থাকা কস্টিউম ডিজাইনার জিমি বিতণ্ডার সময়ের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও করেছিলেন। সেই ভিডিওতে চিৎকার-চেঁচামেচির সময়ে নাসির ইউ মাহমুদকে বলতে শোনা যায়, ‘অমি তুমি এগুলাকে আর ক্লাবে আনবা না।’

মামলার এজাহারে পরীমণি অভিযোগ করেন, বোট ক্লাবে বারের টয়লেট ব্যবহার শেষে নাসির তাকে কফি খাওয়ার অফার করেন। বিষয়টি এড়িয়ে গেলে নাসির মদের বোতল তার মুখে ঠেসে ধরেন। এতে তিনি দাঁত ও ঠোটে ব্যথা পান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পরীমণির সঙ্গে কথা বলবেন। এমনকি আলাদা আলাদা করে তার সঙ্গীদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।

এদিকে এজাহার দায়েরের আগে বাসায় সংবাদ সম্মেলন ও গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরীমণি বলেছেন, তাকে পানীয়র সঙ্গে জোর করে কিছু খাওয়ানো হয়েছিল। যাতে তার গলা ও বুক জ্বলছিল। সেটির কারণেই ঘটনার দিন রাতে বনানী থানায় গিয়ে তিনি অসংলগ্ন আচরণ করেছিলেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী দুই দিন আগে বলেন, ‘৮ জুন রাত সাড়ে তিনটার পর পরীমণি বনানী থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে চান। কিন্তু তিনি অপ্রকৃতিস্থ থাকায় ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলায় পুলিশের একটি দল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। পরদিন তাকে সুস্থ হয়ে থানায় আসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি পরদিন আর থানায় আসেননি।’

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরীমণি বলেন, ‘আমি কি মদ খেতে বোট ক্লাবে গিয়েছিলাম? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? আমাকে মদের সঙ্গে কিছু একটা খাওয়ানো হয়েছিল। আমি তখন মরে যাচ্ছিলাম। সেটি জানানোর জন্যই আমি থানায় গিয়েছিলাম। আমিই বলেছি আমাকে হসপিটালে নিয়ে যান।’ একদিন আগেই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসব কথা বলেন পরীমণি।

বোট ক্লাবের ওই ঘটনার একদিন আগে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে গিয়েও ভাঙচুর করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে পরীমণির বিরুদ্ধে। এদিন তার সঙ্গে সাবেক প্রেমিক তামিম হাসানও ছিলেন।

বুধবার (১৬ জুন) এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরীমণি বলেছেন, ‘আমি যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েই থাকি, তাহলে এতোদিন (৮ দিন) পর কেন সেটি মিডিয়ায় এলো? আমার সঙ্গে যেটা (ঢাকা বোট ক্লাবে নির্যাতন) হয়েছে, হওয়ার পরের চার দিন কিন্তু আমি বসে থাকিনি; সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা কী করেছেন? আমি যদি কোনও অপরাধ করে থাকি, তাহলে তারা কেন এতোদিন চুপ করে ছিলেন? আমি যখন অভিযোগ করলাম, তাদের (ঢাকা বোট ক্লাবে নির্যাতনে অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদ) বিষয়টি সামনে আনলাম; তখন তারা (অল কমিউনিটি ক্লাব) এটি নিয়ে কথা বলছে। বোঝাই যাচ্ছে, আসল ঘটনার ফোকাস ঘোরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

দুটি ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন গত কয়েক বছর ধরে নানা কর্মকাণ্ডে আলোচনায় আসা এই চলচ্চিত্র নায়িকা।

উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ জুন) রাত সোয়া ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণি নিজেকে ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন। এর বিচার চেয়ে আবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

পরদিন সোমবার সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ অজ্ঞাত চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পরীমণি।

এদিনই নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে উত্তরা থেকে আটক করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে মঙ্গলবার মাদকের আরেকটি মামলায় তাদের আদালতে তোলা হয়। এসময় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ ছাড়া আসামি লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে (২৪) তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.