Home » কক্সবাজারের ইয়াবাকারবারীরা কোথায়?

কক্সবাজারের ইয়াবাকারবারীরা কোথায়?

অনলাইন ডেস্ক: সারাদেশের মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ ও র‌্যাবের অ্যাকশন চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের কোনো চিহ্নিত ইয়াবাকারবারীর বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেয়নি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন মাদক কারবারী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। এদের প্রায় সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। কিন্তু ইয়াবার ‘আড়–তঘর’ কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত কোনো ইয়াবাকারবারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়েছে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে অনেকে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শ্লোগান নিয়ে সারাদেশে মাদক নির্মূলে অভিযানে নেমেছে পুলিশ ও র‌্যাব। অভিযানে গত পাঁচ দিনে ৩০জনের বেশি মাদককারবারী পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক। কিন্তু সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও ইয়াবার ডিপো পয়েন্ট টেকনাফের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবাকারবারীদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব ও পুলিশ। একই ভাবে কক্সবাজার জেলায় তালিকাভুক্ত কোনো ইয়াবাকারবারীকে গ্রেফতার করা যায়নি।
তবে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী বলছে, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে হানা দেয়া হচ্ছে। ছয়দিন ধরে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ ও র‌্যাব। ছিঁচকে কারবারী নয়, গড়ফাদার ধরতেই টার্গেট নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আগেও টেকনাফ ও উখিয়াসহ পুরো কক্সবাজার জেলার চিহ্নিত ইয়াবাকারকারীরা প্রকাশ্যে ছিলো। অভিযানের খবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। সাধারণ লোকজন বলছেন, তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারীরা গা ঢাকা দিলেও তারা দূরে কোথাও যেতে পারেনি। এলাকাভিত্তিক গোপন স্থানে আত্মগোপন করে আছে। র‌্যাব-পুলিশ তল্লাশী চালালে তাদের অনেককে গ্রেফতার করতে পারবে। তবে অনেকে আবার সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পালিয়ে গেছেও বলে খবর এসেছে। অনেকে বোটে করে গভীর সাগরে নিরুদ্দেশ হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তালিকা মতে, কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার ৬০ গড়ফাদারসহ ও ১১৫১ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফেই ৯১২ জন। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে কক্সবাজার সদরে ৪৩জন, রামুতে ৩৪জন, কুতুবদিয়ায় ৪৮জন, উখিয়ায় সাতজন, মহেশখালীতে ৩০ ও পেকুয়ায় ২২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে।

কক্সাবাজার জেলার টেকনাফসহ ৮টি উপজেলা নিয়ন্ত্রণকারী ৬০ গডফাদার হলেন- টেকনাফের ওলিয়াবাদ এলাকার আব্দুল শুক্কুর, আব্দুল আলিম, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, বাজারপাড়ার সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুর রহমানের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু, নিপুর মা শামছুন্নার, চৌধুরীপাড়ার পৌর কাউন্সিলর মৌলভী মুজিবুর রহমান, মো. শফিক, মো. ফয়সাল, আলির ডেলের আক্তার কামাল ও তার সহদর শাহেদ কামাল, খানকারপাড়ার কামরুল হাসান রাসেল, শিলবনিয়াপাড়ার হাজী সাইফুল করিম, সাইফুল ইসলাম, আচারবনিয়ার আবুল কালাম, পশ্চিম লেদার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, তার ছেলে মোস্তাক মিয়া, দিদার মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান, ডেলপাড়ার মো. আমিন, তার ভাই নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ইউপি সদস্য এনামুল হক, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, আব্দুর রহমান, নাজিরপাড়ার সৈয়দ মেম্বার, নয়াপাড়ার শামসুল আলম মারকিন, বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, শ্যামলাপুরের হাবিবুল্লাহ, কচুবনিয়ার মৌলভী বসিরউদ্দিন ওরফে ডাইলা, খানকারপাড়ার মৌলভী বোরহান, পুরান ফোরলানপাড়ার শাহ আলম, নাজিরপাড়ার জিয়াউর রহমান, তার ভাই আব্দুর রহমান, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জোবায়ের হোসেন, কাউন্সিলর কুলালপাড়ার নুরুল বশত ওরফে নুসরাত, পুরান পল্লানপাড়ার আব্দুল হাকিম ওরফে ডাকাত আব্দুল হাকিম, হাতিয়ারগোনার মো. আব্দুল্লাহ, জালিয়ারপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, গোদারবিলের আলি আহমেদ চেয়ারম্যানের ছেলে আব্দুর রহমান, তার পুত্র জিয়াউর রহমান, গোলারবিলের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে মো. রাশেদ, মাহবুব মোর্শেদ, বাজারপাড়ার মো. শাহ মালু, নির্মল ধর, পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, বড় হাবিবপাড়ার ইউসুফ জালাল বাহাদুর, নাইটেংপাড়ার ইউনুস, উলুবনিয়ারছরার আব্দুল হামিদ, পশ্চিম শিকদারপাড়ার সৈয়দ আহমদ ছৈয়তু, রঙ্গিখালীর হেলাল আহমেদ, জাদিমুরার হাসান আব্দুল্লাহ, উত্তর জালিয়াপাড়ার মোস্তাক আহমেদ ওরফে মুছু, কুলালপাড়ার মৃত রশিদ চেয়ারম্যানে তিন পুত্র মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন টিটু, আলমগীর হোসেন, সাবরাং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান, নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. আলম ওরফে মাত আলম, মঠপাড়ার আব্দুল জব্বার ও তার ভাই মো. আফসার।

সচেতন মহল দাবি করছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেমির সুযোগে কক্সবাজারের ইয়াবাকারবারীরা গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছেন। অথচ সাঁড়াশি অভিযানটি টেকনাফ দিয়েও শুরু করা উচিত ছিলো। তা না হওয়ায় টেকনাফসহ কক্সবাজারের ইয়াবাকারবারীরা ধরা পড়বে না। এমনকি এখন পর্যন্ত টেকনাফে অভিযানও হয়নি অভিযাগ উঠেছে। এতে সরকারের মাদক বিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযান না হওয়া বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বসে নেই। ইয়াবাকারবারীদের ধরতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। শিগগিরই সুসংবাদ পাবে সাধারণ মানুষ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *