Home » আত্মত্যাগী মায়ের পুরস্কার জান্নাত

আত্মত্যাগী মায়ের পুরস্কার জান্নাত

আউফ বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি ও কালো গালবিশিষ্ট নারী এভাবে থাকব। বর্ণনাকারী ইয়াজিদ মধ্যমা ও তর্জনী আঙুল দ্বারা ইশারা করে দেখান। অর্থাৎ যে বংশীয়া, সুন্দরী বিধবা নারী তার এতিম বাচ্চাদের স্বাবলম্বী করার জন্য আমৃত্যু নিজেকে (পুনর্বিবাহ থেকে) বিরত রেখেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৪৯)

আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) সন্তানের জন্য আত্মত্যাগী মায়ের অনন্য মর্যাদার ঘোষণা দিয়েছেন। যার ভিন্ন জীবনগ্রহণের সব সুযোগ থাকার পরও সে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। এ হাদিস দ্বারা আত্মত্যাগী মায়ের বিশেষ মর্যাদা প্রমাণই উদ্দেশ্য নতুবা সাধারণভাবে সব মায়ের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

কোরআনে মায়ের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মায়ের আত্মত্যাগের বর্ণনা দিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ ও সহানুভূতিশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। মা সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন আমারই কাছে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ১৪)

আরশের ছায়া পাবে সংগ্রামী মা : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে, যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না। (এক) আত্মীয়তা রক্ষাকারী। আল্লাহ তার রিজিক ও আয়ু বৃদ্ধি করবেন, (দুই) স্বামী ছোট সন্তান রেখে মারা যাওয়ার পর যে নারী বলে, আমি আর বিয়ে করব না, এতিম সন্তানদের নিয়ে থাকব যতক্ষণ না তারা মারা যায় অথবা আল্লাহ তাদের স্বাবলম্বী করে, (তিন) যে বান্দা মেহমানদের জন্য খাবার তৈরি করে, তাদের জন্য ভালোভাবে খরচ করে। অতঃপর এতিম ও মিসকিনদেরও খেতে আহ্বান করে। সে তাদের আহার করায় শুধু আল্লাহর জন্য।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, পৃষ্ঠা ১৬৬)

সংগ্রামী মায়ের পাশে থাকবে সমাজ : সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন ও যৌবন বিসর্জন দেওয়া নারীর বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা দিলেও ইসলাম এমন অসহায় মায়ের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যেন সন্তানের জন্য মায়ের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

নবী (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

যার জন্য এই মর্যাদা : মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, ‘এখানে যেসব নারীর কথা বলা হয়েছে যাদের সন্তান ছোট রেখে স্বামী মারা গেছে। কিন্তু সন্তানের প্রতিপালনের জন্য সে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি। অথচ সে এমন সৌন্দর্য, গুণাবাল ও বংশ মর্যাদার অধিকারী ছিল যে পুরুষরা সহজেই তার প্রতি আগ্রহী হতো। সে বিয়ে করে বৈধ সুযোগ গ্রহণ ও পাপাচার উভয়টি থেকে নিজেকে সংযত রেখেছে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৯/১৯০)

মর্যাদা লাভের শর্ত : হাদিসে বিধবা নারীর জন্য যে বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে, তা লাভের জন্য শর্ত হলো জৈবিক চাহিদা ও অভাব-অনটনে পড়ে দ্বিন-ধর্ম নষ্ট হওয়ার ভয় না থাকা। এমন ভয় থাকলে নারীর জন্য বিয়ে করা আবশ্যক। আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) বলেন, ‘কখনো কখনো বিধবা নারীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে প্রথম বিয়ের মতো ফরজ। যেমন বিধবা যুবতী হলে, তার বিভিন্ন আচরণে বিয়ের চাহিদা প্রকাশ পেলে, বিয়ে না দিলে ফিতনার ভয় থাকলে, খাওয়া-পরার কষ্ট থাকলে, দারিদ্র্যের কারণে দ্বিন-ধর্ম ও সম্ভ্রম নষ্ট হওয়ার ভয় আছে—এমন নারীর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে ফরজ।’ এমন অবস্থায় বিধবা নারী বিয়ে করতে না চাইলেও তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। (মুসলিম বর-কনে ইসলামী বিয়ে, পৃষ্ঠা ৬৩)। আল্লাহ সব সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী মাকে উত্তম জীবন দান করুন। আমিন।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *