Home » একটি চিঠি জীবনের গতিপথ বদলে দেয়

একটি চিঠি জীবনের গতিপথ বদলে দেয়

আমি আপনাদের একটি ঘটনা শোনাই। ঘটনাটি আমার নিজের সঙ্গেই ঘটেছে। আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে জার্মানি থেকে আমার কাছে এক ব্যক্তির চিঠি আসে। লোকটি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। পরে জার্মানির নাগরিক হয়ে গেছেন। তাঁর নাম আবদুল লতিফ।

চিঠির ভাষ্য এমন : ‘আমি রুটি-রুজির তালাশে পাকিস্তান থেকে জার্মানিতে চলে আসি। তখন ধর্মকর্মের প্রতি আমার আগ্রহ-আকর্ষণ কিছুই ছিল না।

জার্মানির এক মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। আমি মুসলিম হলেও ইবাদত-বন্দেগি করতাম না। একপর্যায়ে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের এক পুত্রসন্তান হয়।

ছেলে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। দেখি তার মা তাকে খ্রিস্টধর্মে বড় করছে। এটা দেখে আমার ভেতর মুসলিমসত্তা জেগে ওঠে। কী, আমার সন্তান খ্রিস্টধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করছে! সেদিন থেকে আমি নিজেকে ভিন্নভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করি। আমি ওর মাকে বললাম, ও আমার ছেলে। তুমি তাকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে পারো না। আমার স্ত্রী জবাবে বলল, সে তো আমারও সন্তান। আমি যা সত্য ও সঠিক মনে করি, ছেলেকে তা অবশ্যই শেখাব। তুমি আমাকে এতে কোনোভাবেই বাধা দিতে পারো না। আমি বললাম না, তোমার ধর্ম সঠিক নয়, আমার ধর্মই সঠিক। আমার স্ত্রী বলল, তোমার ধর্ম কেন সঠিক? আমাকে বুঝিয়ে বলো। এরপর ধর্ম নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। দেখি, খ্রিস্টধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান আছে; কিন্তু আমি তো আমার ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না। ফলে বিতর্কে আমি পরাজিত হয়ে যাই। এভাবে সংসার চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি নামাজ-রোজায় মনোযোগী হই।

হজরত, আমার স্ত্রী আমার সন্তানের জীবন ধ্বংস করছে। তাকে খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলছে। আল্লাহর দোহাই, আপনি আমাকে উদ্ধার করুন।’

এ চিঠি আমার কাছে আসে। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ, লোকটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। তাঁকে মুক্তিপথের দিশা দিন।

দোয়া-দরুদ পড়ে আমি তাঁর চিঠির জবাবে লিখেছি যে খ্রিস্টবাদ বিষয়ে আমার একটা কিতাব রয়েছে। উর্দুতে ‘ঈসাইয়্যাত কিয়া হ্যায়’ নামে, আর ইংরেজিতে What Is Christianity নামে (এবং বাংলায় ‘খ্রিস্টধর্মের স্বরূপ’ নামে) প্রকাশিত হয়েছে। আপনি নিজ থেকে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো বিতর্কে জড়াবেন না। কারণ বিতর্কে তেমন ফল হয় না। বিশেষ করে যখন ধর্ম সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না। এ জন্য আমার পরামর্শ হলো, আপনি তাকে যেভাবে পারেন দুটি কাজ করতে প্রস্তুত করুন :

এক. আমি যে কিতাব পাঠাচ্ছি, তা তাঁকে পড়ার অনুরোধ করুন।

দুই. তাঁকে বলুন যে তুমিও আল্লাহকে বিশ্বাস করো আমিও আল্লাহকে বিশ্বাস করি। তুমি প্রতি রাতে উঠে আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করো যে হে আল্লাহ, যদি খ্রিস্টধর্ম সত্য হয়, তাহলে আমি যেন তাতে অবিচল থাকতে পারি। আর যদি ইসলাম ধর্ম সত্য হয়, তাহলে এর সত্যতা আমার অন্তরে গেঁথে দাও। এভাবে তাঁকে দোয়া করার জন্য প্রস্তুত করুন।

কয়েক দিন পর দ্বিতীয় পত্র আসে। সেখানে লেখা রয়েছে—‘হজরত, আমার স্ত্রী দুটি কাজ করতে রাজি হয়েছে। আপনার কিতাব পড়া শুরু করে দিয়েছে এবং রাতে উঠে উঠে দোয়াও করছে। কিন্তু এখনো কোনো পরিবর্তন দেখি না।

আমি এর জবাবে লিখেছি, ‘ঘাবড়াবেন না। তাঁকে বলবেন, তিনি যেন দোয়া অব্যাহত রাখেন।’ আমিও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকি, হে আল্লাহ, তুমি তাঁর মনে সত্য ঢেলে দাও।

কয়েক দিন পর তৃতীয় চিঠি আসে। তিনি লিখেছেন—‘মাওলানা, আপনি আল্লাহকে হয়তো দলিল-প্রমাণের আলোকে চিনেছেন। কিন্তু আমি আল্লাহকে চোখে দেখে চিনেছি। গতকালের ঘটনা : আমার স্ত্রী ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। কাজ শেষ করে আমরা যখন ফিরছিলাম, সে গাড়ি ড্রাইভ করছিল। হঠাৎ গাড়ি সাইডে নিয়ে ব্রেক করল। স্টিয়ারিংয়ের ওপর মুখ রেখে কাঁদতে শুরু করল। আমি ভাবলাম, হয়তো হার্টে প্রবলেম হয়েছে! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হলো? এতে তার কান্না আরো বেড়ে গেল। হেঁচকি তুলে সে কাঁদতে লাগল। আমি ভড়কে গেলাম। বললাম, আরে! বলো কী হয়েছে?

কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমাকে কোথাও নিয়ে তাড়াতাড়ি মুসলমান বানিয়ে নাও। আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ কি সেই মেয়ে, যে আমার সঙ্গে ইসলাম নিয়ে বিতর্ক করত! আর আজ সে বলছে, আমাকে মুসলমান বানিয়ে নাও! আমি দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে তাকে নিকটতম ইসলামিক সেন্টারে নিয়ে গেলাম। আলহামদু লিল্লাহ, সেখানে সে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়েছে।

ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। গত রাত প্রথম রমজানের রাত ছিল। আমরা উভয়ে আজ সাহরি খেয়েছি। আজ প্রথম দিন, যেদিন আমরা উভয়ে একসঙ্গে রোজা রাখছি।’

এ তো ছিল আবদুল লতিফের চিঠি। দ্বিতীয় আরেকটি চিঠি ছিল তাঁর স্ত্রীর। তিনিও তাতে লিখেছেন, আমি আপনার শুকরিয়া আদায় করছি। আপনি আমাকে এমন পথের সন্ধান দিয়েছেন, যা আমার সামনে সত্য উদ্ভাসিত করে দিয়েছে।

অনুবাদ : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *