Main Menu

করোনায় বিপাকে শিক্ষাঃ প্রাইমারিতে প্যানেল গঠনের প্রয়োজন

শিক্ষা হল সম্ভবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিশুর জীবন গঠনে নিয়মতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপই হল প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার মান উন্নয়নে শতভাগ গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।

প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মান বিচারঃ
২০১৩ সালের ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট অনুসারে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া প্রতি ৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১ জন গণিত ও বাংলায় উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করেছে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, প্রাথমিকে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ হলেও মাত্র ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের যোগ্যতা অর্জন করে এবং মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় পৌঁছাতে পারে। রিপোর্টে আরও উঠে আসে তীব্র শিক্ষক সংকটের কারণে ৪৬ লাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫% শিক্ষার্থী রিডিং পড়তে পারেনা যার অন্যতম কারণ শিক্ষক সংকট। ২০১৯ সালে ইউনেস্কো এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করে শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষকের অভাব আছে। তারমধ্যে যে কয়েকজন আছেন তারাও তাদের পুরো সময় দিতে পারেন না (প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক কাজের চাপ, মাতৃকালিন ছুটি, প্রশিক্ষণ জনিত ছুটি ইত্যাদি)। তাছাড়া শিক্ষক সংকটের কারণে দূর্বল শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন জানান ২০১৮ সার্কুলারে নিয়োগ সম্পন্ন করার পরেও ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ২৯ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য আছে যা এতদিনে ৪০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

২০১৮ সালের সার্কুলার ও প্যানেলঃ
২০১৮ সালে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে দেশের ইতিহাসে প্রথম সারাদেশ থেকে ২৪ লাখ পরিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে যেখানে মাত্র ৫৫ হাজার ২৯৫ জন লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন (শতকরা ২.৩ শতাংশ)। ১৮ হাজার ১৪৭ জন চুড়ান্ত নিয়োগে সুপারিশপ্রাপ্ত হন এবং ৩৭ হাজার ১৪৮ জন মৌখিক পরিক্ষায় পাশ করেও নিয়োগ বঞ্চিত হন (২৯ মে, ২০২০ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ বলেন ২০০৯ থেকে নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী প্রাইমারিতে মৌখিক পরিক্ষায় পাশ/ফেল বলে কিছু নেই, উপস্থিত হলে ১৪/১৫ মার্ক দেওয়া হয়)। উল্লেখ্য ২০১০, ২০১২, ২০১৩ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেলে নিয়োগ হয়। তাহলে ২০১৮ সার্কুলারে রেকর্ড সংখ্যক পরিক্ষার্থীর মধ্যে আমরা মাত্র ২.৩ শতাংশ পাশ করেছি অর্থাৎ আমাদের মেধা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আমরা প্রায় সবাই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন এবং প্রথম শ্রেণির রেজাল্ট নিয়ে উত্তীর্ণ।

মিডিয়ায় উঠে আসা শিক্ষক সংকটের চিত্রঃ
১৪ মার্চ, ২০২০ বাংলাদেশ জার্নালে প্রকাশিত হয় এক শিক্ষকেই চলছে ৭৫০ প্রাথমিক স্কুল। রিপোর্টে প্রকাশ করা হয় কুড়িগ্রামে বিভিন্ন স্কুলে মাত্র ১ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশনঃ অ্যানুয়াল সেক্টর পারফরম্যান্স রিপোর্ট ২০১৯’ এর তথ্যমতে মাত্র ১ জন শিক্ষকে চলছে দেশের ৭৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। ২ জন শিক্ষকে চলছে ১ হাজার ১৪২ টি এবং ৩ জন শিক্ষকে চলছে ৪ হাজার ৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ বলেন ৩ জনের কম শিক্ষক দিয়ে কোনমতে পাঠদান চালানো সম্ভব না।

পত্রিকা ও মিডিয়ায় রিপোর্ট হয়েছে কোথাও কোথাও স্কুলের দপ্তরি, মসজিদের ইমাম দিয়ে পাঠদান চালানো হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় কোথাও কোথাও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়ে তৃতীয়, দ্বিতীয় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

প্যানেল নিয়ে বিশিষ্ট জনের মতামতঃ
মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ভয়াবহ শিক্ষক সংকট দূর করার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষক সংকট নিরসনে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান। ১৬ মে, ২০২০ দৈনিক শিক্ষাডটকম কে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই আহ্বান জানান। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ বজলুর রহমান স্যার বলেন ‘২৪ লাখ! কথাটা শুনলেই আমার শরীর শিউরে ওঠে। যারা এই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছে তারা সবাই চাকরির জন্য কোয়ালিফাইড। সুতরাং তাদের প্যানেল দাবী সম্পূর্ণ যৌক্তিক বলে আমি মনে করি’।
দৈনিক শিক্ষার এক ফেসবুক লাইভে সাবেক শিক্ষা সচিব ও মাননীয় ডিজি মহোদয় নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রয়োজন কখনো আইন মানে না, প্রয়োজন আইনের ঊর্ধ্বে। প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে কোন আইনি জটিলতা নেই’।

করোনা ও প্যানেলের বাস্তবতাঃ
করোনা পরবর্তীতে নতুন সার্কুলার দিয়ে শিক্ষক চুড়ান্ত করতে কমপক্ষে তিন বছর সময় লেগে যাবে ততদিনে শূন্য পদ দাঁড়াবে প্রায় ৯০ হাজার (প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জরিপ মতে, প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন শিক্ষক অবসরে যান) করোনা পরিস্থিতিতে মার্চ মাস থেকে ক্লাস বন্ধ রয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। তাহলে স্কুল খোলার সাথে প্রাথমিক শিক্ষা যে মহাসংকটে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স প্যানেলে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন এবং আরও ২ হাজার ডাক্তার নিয়োগের পরিকল্পনা চলছে। তাহলে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাঁচাতে আমাদের প্যানেল নিয়োগ কেন নয়?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ‘মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না’ এবং নির্বাচনী ইশতেহার ‘প্রতি ঘরে একজনকে সরকারী চাকরি দেওয়া হবে’ পূরণ করতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ এ প্যানেলে নিয়োগের কোন বিকল্প নেই।

পরিশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি এবং প্যানেলে নিয়োগ দিয়ে আমাদের বেকারত্ব থেকে মুক্তিদানের আকুল আবেদন জানাচ্ছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

সোহানুর রহমান
সভাপতি, নড়াইল জেলা প্যানেল প্রত্যাশী কমিটি

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.