Home » ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চলছে ফাঁকি

ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চলছে ফাঁকি

ডেস্ক নিউজ: সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দেশজুড়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ব্যবসার ছড়াছড়ি। সাইনবোর্ড-সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ঠকিয়ে চলেছে নিরীহ মানুষকে।

একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার বিস্তর নজির রয়েছে। পুরুষদের পরীক্ষা রিপোর্টে তুলে ধরা হয় মেয়েলি রোগের হালফিল বিবরণ। আবার উল্টো চিত্রও আছে। বিলের ক্ষেত্রেও আছে সীমাহীন নিয়ন্ত্রণহীনতা। একই পরীক্ষা-নিরীক্ষা একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একেক রকম বিল আদায় করে নেওয়া হচ্ছে।

ডায়াগনস্টিক টেস্টের ক্ষেত্রে কোনো মানদণ্ড নিশ্চিত হচ্ছে না। নিশ্চিত হচ্ছে না জবাবদিহি। এদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থপাচারের অভিযোগও। এই কারণে অনেকে মনে করেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিভিন্ন টেস্টের প্রতিটি বিলের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্সের হিসাব থাকলে ফাঁকি বন্ধ করা সহজ হবে।

সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণির ডাক্তারদের সহায়তায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যথেচ্ছ টেস্টবাণিজ্য চলছে বছরের পর বছর। বেশির ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত সার্টিফিকেটধারী দক্ষ টেকনিশিয়ান পর্যন্ত নেই। ডায়াগনস্টিক প্রতারণার শিকার মানুষজন বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। অভিযোগ উঠেছে, কমিশনের লোভে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেওয়া হয় না।

এখানে সবচেয়ে দামি আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে দ্রুততম সময়েই সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। জটিল-কঠিন কি সাধারণ সব রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে নানা কায়দায় নানাভাবে চলছে ‘টেস্ট-বাণিজ্য’। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হুমকি-ধমকি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কড়া নোটিশ, নজরদারির নানা ঘোষণা সত্ত্বেও ডাক্তারদের টেস্ট-বাণিজ্য কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। ‘যত টেস্ট তত টাকা’ এই কমিশন-বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই চলছে একশ্রেণির ডাক্তারের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড।

প্রেসক্রিপশনে যত বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকবে, ততই কমিশন পাবেন তিনি। ‘ডাক্তারদের কমিশন ছাড়া বাকি সিংহভাগই লাভ’ এ মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে যে কেউ যেখানে সেখানে ডায়াগনস্টিক বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন।
কথায় কথায় টেস্ট: সাধারণ রোগের জন্যও চিকিৎসকরা বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে রোগীদের পাঠাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখান থেকে তারা পাচ্ছেন কমিশনের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। নিজেদের আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান দাবি করে একশ্রেণির বেসরকারি হাসপাতাল রোগীদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সেসব স্থানে রোগীদের রীতিমতো জিম্মি করেই ‘মুক্তিপণ’ স্টাইলে টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। সাধারণ জ্বর বা পেটব্যথা নিয়ে কোনো রোগী হাজির হলেও কয়েক ডজন টেস্ট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অপারেশন করাসহ জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে উল্টো রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে লাইফ সাপোর্টে। আর এর প্রতিটি ধাপেই চলে টাকা আদায়ের ধান্দা। টেস্টের নামে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ আদায় এখন অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেসব ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়, এর মোট মূল্যের ৪০ ভাগ কমিশন-সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপত্র প্রদানকারী চিকিৎসক পেয়ে থাকেন। কমিশনের পাশাপাশি সুপারিশ করায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে নানা ধরনের উপহারসামগ্রী পেয়ে থাকেন তারা। ফলে কমিশন ও উপহারসামগ্রী গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হচ্ছেন চিকিৎসকরা।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৭-তে এ চিত্র উঠে এসেছে। দুদক বিষয়টিকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে চিকিৎসকদের এই দুর্নীতি রোধে প্যাথলজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রতিটি পরীক্ষার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য সরকারিভাবে নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে।

যেমন খুশি ফি : ডাক্তাররা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহ করা স্লিপে টিক মার্ক দিয়ে দেন কোন কোন টেস্ট করাতে হবে। রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করালে ডাক্তার ওই রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে চাপ দেন। কমিশন নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল চিকিৎসা মেলে।

এ সুযোগে কথিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরীক্ষার ফি বাবদ ইচ্ছামাফিক টাকা আদায়ের মনোপলি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। খেয়ালখুশি মতো বাড়ানো হচ্ছে সেবা ফি। চিকিৎসার নামে নানা কৌশলে রোগী ও তার স্বজনদের পকেট খালি করেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ক্ষান্ত হচ্ছে না, উপরোন্তু রোগীকে বন্দী রেখে বা রোগীর লাশ জিম্মি করেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

ভুয়া চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি : রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি অনুমোদন নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করে না। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন পাঠিয়েই বড় বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোগ নিরাময় কেন্দ্র খুলে বসেছেন। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রও নেয়নি এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেশে বৈধ লাইসেন্সে মাত্র সাত হাজার ৯০০

পরিচালক বললেন : স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিচালক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সিভিল সার্জন থেকে অনুমোদন নিয়ে কিংবা ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই আর স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান খুলে বসতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত নজরদারিসহ জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার কারণে অর্ধশতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *