Main Menu

সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্দেশনা দিচ্ছে পুলিশ

প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি সব মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও খাবার দোকান খোলা রাখতে দিচ্ছে না পুলিশ। নানা অজুহাত ও গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড, কনফেকশনারীসহ সব ধরনের খাবার হোটেল।

বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযানে এসব খাবারের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশকে সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেখানোর পর গ্রেফতারের ভয় দেখিয়েছে পুলিশ।
তবে পুলিশের ভাষ্য, জনসমাগমের আশংকায় অপ্রয়োজনীয় দোকান বন্ধ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে চলে পুলিশের এই তৎপরতা। সকাল সকাল রাজধানীর মহাখালী, ফার্মগেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকার খাবারের দোকানগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এসব এলাকায় জনসাধারণ বেশি থাকে বিধায় খাবারের দোকানে ভিড় হবে তাই এগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

পাশাপাশি বন্ধ করা হয় পুরান ঢাকার নয়াবাজার, বেগমবাজার, চকবাজার, হাজারীবাগ, লালবাগসহ ধানমন্ডির খাবারের দোকানগুলো।

ধানমন্ডির ঝিগাতলায় একটি চেইন বেকারি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শোরুমে গিয়ে ম্যানেজারকে এটি বন্ধের নির্দেশ দেন কয়েকজ পুলিশ সদস্যা।ম্যানেজার তাদেরকে সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে জানালে পুলিশ সদস্যরা ‘দোকান বন্ধ না করলে গ্রেফতার’ করার হুমকি দেন।

ওই বেকারির ম্যানেজার জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দোকানে কেক, টোস্ট বিস্কিটসহ নানা শুকনা খাবার বিক্রি হয়। এছাড়া জনস্বার্থে আমরা কোম্পানি থেকে চাল-ডাল ইত্যাদি এনেও বিক্রি করছি। দোকানের বাইরে আমাদের একজন স্টাফ সার্বক্ষণিক দাঁড়িয়ে ছিল। সে একজন বের হয়ে যাওয়ার পর আরেকজনকে প্রবেশ করাচ্ছিল। দোকানে কোনো জনসমাগমের সুযোগ ছিল না। এরপরও দোকান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জনসমাগম হয় এমন দোকানপাট (খাবারের দোকানসহ) বন্ধে আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি।’

এদিকে পুরান ঢাকায় খাবার হোটেল বন্ধের কারণে চরম বিপাকে পড়েছে ভাড়াটিয়া ও মেসে বসবাসকারীরা। পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক জাগো নিউজকে বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের ভয়ে মেসের মালিক বাসায় রান্না ও কাপড় ধোয়ার গৃহকর্মীকে আসতে নিষেধ করেছেন। আমরাতো সরকারের নির্দেশনা মেনে গ্রামে যাইনি। ঘরে খাবার নেই, হোটেলও বন্ধ। গত দুইদিন ধরে শুধু মুড়ি খেয়েছি। আজ মেসের হিটারে শুধু ভাত ও ডাল রান্না করে খেয়েছি। পুলিশ দুইদিন ধরেই এলাকার কোনো খাবার হোটেল খোলা রাখতে দিচ্ছে না। সবমিলে আমরা অনেক কষ্টে আছি।

সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন ও বিক্রয় প্রতিনিধিকে অবাধে চলতে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

২৫ মার্চ জারিকৃত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের পাশাপাশি বিক্রয় প্রতিনিধির চলাচলে সহায়তা প্রদানে নির্দেশনাক্রমে অনুরোধ করা হল। তবে এরপরেও তাদের অবাধে চলাচলে বাধা দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

এদিকে অনেক রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেল বন্ধ রেখেও নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দিয়ে খাবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। অনেক সুপারশপ অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ঘরে ঘরে মুদিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডেলিভারি করে। তবে তাদেরকেও আটকে দিচ্ছে পুলিশ।

অনলাইন গ্রোসারি শপিংয়ের ওয়েবসাইট চাল ডাল ডটকমের এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সর্বোচ্চ ১-৪ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনো পণ্য ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দেয়। ডেলিভারিম্যান পণ্য পৌঁছানোর পর নগদে টাকা সংগ্রহ করে। তবে বাইকে পণ্য পৌঁছে দেয়া ডেলিভারিম্যানদেরও নানা অজুহাতে আটকে দিচ্ছে পুলিশ। ফলে বাধ্য হয়ে রাত ১০টার পর থেকে ডেলিভারি করছেন তারা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, করোনা প্রতিরোধে খাবার হোটেল খোলা রাখলেও ভেতরে বসিয়ে খাবার পরিবেশনের সুযোগ নেই। ক্রেতারা শুধু পার্সেল নিয়ে যেতে পারবে। আমরা এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

বন্ধের দিনগুলোতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

২৫ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখার উপপ্রধান শেখ বদিউল আলম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক, ইউএনও, উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর চিঠি পাঠান। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পণ্য হিসেবে রাসায়নিক সার ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য/উপকরণ, ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতদের পণ্য পরিবহন ক্রয়-বিক্রয় যাতে কোনোরূপ অসুবিধা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন ও বিক্রিতে পুলিশের বাঁধার বিষয়টি ওঠে এসেছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) মহাসচিব মো. ইকতাদুল হক বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত হচ্ছে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, পণ্য পরিবহনে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বাজারজাতকারীদের কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি বাধা দেয়া হচ্ছে। যেভাবে আমরা বাধা পাচ্ছি সেখানে সরকারি সার্কুলার দেখাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা না বোঝার কারণে মূলত এটা হচ্ছে বলে মনে করছি। আবার কারো কারো ইল মোটিভ থাকলেও থাকতে পারে। কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আগে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। তাহলে মানুষ হয়রানির স্বীকার হবে না।’

এ বিষয়ে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম দিন তো এজন্য একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা শুনেছি সারের দোকানের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, খুলতে দিচ্ছে না। কমিউনিকেশনে একটু ত্রুটি থাকতে পারে। আমার ধারণা এটা শিগগিরই আজ ও কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে চিঠি ইস্যু করেছি। ডিসিদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। পৌঁছাতেও তো একটু সময় লাগে। মেসেজটা হয়তো এখনও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পৌঁছায়নি। আশা করছি কমিউনিকেশন গ্যাপটা কালকের মধ্যে দূর হয়ে যাবে। এরপরও যাদের সমস্যা হবে, আমাদের সঙ্গে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ১০ নির্দেশনার প্রথমটি এ সংক্রান্ত

করোনা প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ১০ দিনের ছুটিসহ দেশবাসীকে ১০টি নির্দেশনা দেন। প্রথম পয়েন্টটিতেই ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে এতে আরও উল্লেখ ছিল, ‘কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতালসহ জরুরি যেসব সেবা রয়েছে সেসব এর আওতাভুক্ত হবে না। জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ক্রয় ও চিকিৎসা গ্রহণ ইত্যাদি) কোনোভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ঘরের বাইরে গেলেও খাদ্যদ্রব্যের দোকানই খোলা পাওয়া যাচ্ছে না।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংবাদ সম্মেলন ও ইমেইলে পাঠানো নির্দেশনা

২৪ মার্চ অনানুষ্ঠানিক লকডাউনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ছুটিতে জনগণ ও যানচলাচল সীমিত থাকলেও ওষুধ/খাদ্য প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়সহ অন্যান্য শিল্প কারখানা/প্রতিষ্ঠান/বাজার/দোকানপাট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। পাশাপাশি ট্রাক, কার্গো অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদপত্রবাহী গাড়ি চলবে।

জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা

২৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিধি-৪ শাখা) কাজী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার বিস্তার প্রতিরোধের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কাঁচা বাজার, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি পরিসেবার (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি) ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

দেশের জেলা প্রশাসকদের দেয়া এক চিঠিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে পোল্ট্রি, ডিম, দুধ, মুরগির একদিনের বাচ্চার উৎপাদন, সরবরাহ ও পরিবহন স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দিয়েছে। জাগোনিউজ

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.