Home » সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করছে রাষ্ট্র

সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে নতি স্বীকার করছে রাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক :  মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র রক্ষণশীল, সাম্প্রদায়িক, উৎসববিরোধী, নারী অধিকারবিরোধী শক্তির কাছে নতি স্বীকার করছে, যা খুবই লজ্জার বিষয়।

পয়লা বৈশাখে উন্মুক্ত স্থানে আয়োজিত নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে এবং রবীন্দ্রসরোবরের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত চলতে পারবে—রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নারী নিরাপত্তা জোট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। নারী নির্যাতন বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্যও তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নারী নিরাপত্তা জোটের আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, প্রতিমুহূর্তেই নারীর জন্য বাইরের জায়গা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। নারী কোথায় যাবেন, কোন পোশাক পরবেন, তা অন্যদের মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে। রাষ্ট্রও বিরোধী শক্তির কাছে নতি স্বীকার করছে। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান কেউ চাইলে বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতেই পারে। কথা সেটা না; কথা হলো, রাষ্ট্র কেন তা বলে দেবে? এটা তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব না। নাগরিক উৎসবের মধ্যে বা কর্মক্ষেত্রে যেখানেই থাকুক, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাকে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দেওয়া।

সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের ঘোষণা অনুযায়ী, বিকেল পাঁচটার পর যে-কেউ যেকোনো কিছু ঘটাতে পারে। কোনো নারী তখন রাস্তায় থাকলে বা কোনো বিপদ হলে রাষ্ট্র তখন তাঁকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। বলবে, বিপদের কথা তো আগেই বলে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মহুয়া লিয়া ফলিয়া। এতে পয়লা বৈশাখের আগে বিকেল পাঁচটার মধ্যে জনগণ উন্মুক্তস্থানে থাকতে পারবে না—এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত স্থানগুলো যাতে নারী ও পুরুষের চলাচলের উপযোগী থাকে, তার ব্যবস্থা করা, নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি নারী নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৫ সালে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নেওয়া নারীদের যৌন হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়। এই ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন প্রতিবাদ গড়ে তোলে। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদকে সমন্বয় করার জন্য মানবাধিকারকর্মী, নারীনেত্রী, উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির প্রতিনিধিদের মোর্চা হিসেবে এ নারী নিরাপত্তা জোট আত্মপ্রকাশ করে। তবে ২০১৫ সালের ওই যৌন হয়রানির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, কোনো জনসমাগম অথবা গণ-অনুষ্ঠানে নারীরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেনই।

সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ বলেন, যেকোনো উৎসবে মুক্তভাবে বিচরণ করার অধিকার সবার আছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া। রাষ্ট্র তা না করে উৎসবটাই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সব মিলে মনে হয়, রাষ্ট্র উল্টো দিকে হাঁটছে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *