যুক্তরাজ্য থেকে ঢাকায় আসার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেছেন। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে এবারকেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করেন তিনি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি খালেদা জিয়ার স্বাস্থের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। বেলা পৌনে ১১টায় ডা. জুবাইদা রহমানকে বহনকারী ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ডা. জুবাইদা রহমান এখন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও তাঁর চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া বর্তমানে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
এদিকে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স না পৌঁছানোয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শুক্রবার আসছে না। সব ঠিক থাকলে সেটা শনিবার পৌঁছাতে পারে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর যদি যাত্রার উপযুক্ত থাকে এবং মেডিকেল বোর্ড যদি সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে ইনশাল্লাহ ৭ তারিখ (রোববার) ফ্লাই করবেন।’
খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রায় চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী হবেন। তারা হলেন—খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও চোখের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ নভেম্বর তাকে হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা টানা এক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত আছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমেরিকা (জনস হপকিন্স), ইউকে (লন্ডন ক্লিনিক) এবং চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ মেডিকেল টিমের অধীনে তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। একইদিন বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান। রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।এদিকে খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় আজ শুক্রবার সারা দেশে মসজিদে মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা করছে বিএনপি। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি