অনলাইন ডেস্ক: ২০২৬ সালের হজে কোরবানি ও খাবার ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সৌদি আরব। নতুন বিধান অনুযায়ী, হাজিদের বাধ্যতামূলকভাবে সৌদি সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোরবানি সম্পাদন ও সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসের খাবার গ্রহণ করতে হবে। এতে ভিনদেশি খাবারে অনভ্যস্ত বাংলাদেশি হাজিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আগেভাগেই হজের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করার নতুন সময়সূচি বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
সৌদি সরকার সম্প্রতি হজ কার্যক্রমের সময়সূচি ঘোষণা করেছে। এর আওতায় ১২ অক্টোবরের মধ্যে হজের চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২৭ জুলাই থেকে, যেখানে ৪ লাখ টাকা জমা দিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সৌদি প্রান্তে সেবা প্যাকেজের অর্থ স্থানান্তর, ৪ জানুয়ারি সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি এবং ২০ জানুয়ারি হজযাত্রীদের আবাসন ও পরিবহনের অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ-সৌদি দ্বিপাক্ষিক হজচুক্তি হবে ৯ নভেম্বর।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এত আগেভাগে জটিল প্রস্তুতি শেষ করা দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। চলতি বছরের মতো দেরিতে নয়, এবার আগস্টের মধ্যেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় হজ ও ওমরাহ ফেয়ারের শেষ দিনে মেলায় আসা হাজি আশরাফ আলী বলেন, ‘হজে গিয়ে নিজের মতো করে কোরবানি দেওয়ার আলাদা আনন্দ আছে। এখন যদি সব কোরবানি সৌদি সরকারের এক ফরমেটে হয়, তাহলে সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। এটা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত করবে।’
আরেক হজযাত্রী, মোহাম্মদপুরের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের দেশের রান্না আরব দেশের মতো নয়। ওরা ঝাল-তেল ছাড়া খাবার দেয়। টানা এক মাস সেই খাবার খেতে হলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হজ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘খাবার ও কোরবানির সিদ্ধান্ত সরাসরি হাজিদের ধর্মীয় অনুশীলনের সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের আপত্তি রয়েছে। আমরা চাই সৌদি সরকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুক। নইলে হাজিরা অসুস্থ হয়ে পড়লে অসন্তোষ তৈরি হবে।’এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানান, সৌদি কর্তৃপক্ষকে সরকারি ক্যাটারিং সার্ভিসে বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়ার দাবি জানাবে ঢাকা।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘প্রাথমিক নিবন্ধনে ৪ লাখ টাকা একসঙ্গে দেওয়া হাজিদের জন্য কঠিন। আমাদের দাবি ছিল টাকা দুই ধাপে নেওয়া হোক। এতে চাপ কমবে।’কোরবানি প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘কেউ ৫০০ রিয়ালে কোরবানি দেন, কেউ দেন ১ হাজার ৫০০ রিয়ালে। সামর্থ্যরে ভিত্তিতে এই বৈচিত্র্য থাকে। এক ফরমেটে বাধ্যতামূলক করলে অনেক হাজি সমস্যায় পড়বেন।’
খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকার কেবল মিনা ও আরাফায় তিন-চার দিনের খাবার দিত, তা নিয়েই হাজিদের অভিযোগ ছিল। এবার যদি পুরো মাসের খাবারের দায়িত্ব নেয়, তাহলে অসন্তোষ বাড়বে।’সরকারের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, ‘হজ দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার বিষয়। সৌদি সরকার তাদের সুবিধামতো রোডম্যাপ দিয়েছে। তাই আমাদের আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
জানা গেছে, এরই মধ্যে সৌদি সরকারের ‘নুসুক মাসার’ প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হাজিরা সাধারণত হজের দুই-তিন মাস আগে প্রস্তুতি নেন। কিন্তু এবার সৌদি সরকার ছয় মাস আগেই সব কাজ শেষ করতে চাইছে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, হজ ও ওমরাহর বিধিবিধান এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের অবহিত করতে হাব-এর উদ্যোগে তিন দিনের হজ ও ওমরাহ ফেয়ার শেষ হয় গতকাল সন্ধ্যায়। হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি, সঠিক তথ্যসেবা দেওয়া হয় মেলায়। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন হজ এজেন্সির প্যাকেজ ও প্রদত্ত সুবিধা যাচাই করে মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব ছাড়াই সরাসরি বুকিং করার সুবিধা নেন।
প্রতিনিধি