কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে একদফা সরকার পতনের আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে। ওই দিনই ক্ষমতা হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একবছর পূর্ণ হবে ৮ আগস্ট। আর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একবছর পূর্ণ হলো ৫ আগস্ট।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রম গ্রহণ করে। একইসঙ্গে বিগত সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সব সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নেয় সরকার। ফৌজদারি আইনে বিচারের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সে মামলার শুনানি চলছে। ইতোমধ্যে গত ২ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রলীগকে এর আগেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
১০ মে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর দুই দিনের মাথায় ১২ মে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
শেখ হাসিনাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্যান্য মামলার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। যদিও এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে থেকে বিতর্ক রয়েছে।
মামলা ও গ্রেফতার
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে। গ্রেফতার হন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দলের অসংখ্য নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ হিসেবেও অনেককে গ্রেফতারকরা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা মামলায় আটক রয়েছেন পত্রিকার সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
ভাঙা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি— যা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ খ্যাত। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং তৌহিদী জনতা ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলা শুরু করে। দুদিন ধরে বাড়ি ভাঙার কর্মযজ্ঞ চলে। কিন্তু এর জোরালো কোনও প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে। অন্তর্বর্তী সরকার বাড়িটি রক্ষা না করলেও পরে একটি প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
অনলাইনে সক্রিয়
দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় রাজপথে না থাকলেও অনলাইন প্লাটফরম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যায়। তবে একই কারণে গণমাধ্যমে বিশেষ করে পত্রিকা ও টেলিভিশনে তাদের কোনও উপস্থিতি নেই।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের এক বছর পূর্ণ হলেও রাজনীতির মাঠে তাদের অবস্থান এখন শূন্যের কোটায়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন