Main Menu

রোডম্যাপ চায় বিএনপি, সংষ্কার চায় জামায়াত ও এনসিপি

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার সন্ধ্যার পর এই তিন দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন এবং এ লক্ষ্যে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে।
এ ছাড়া বৈঠকে জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করা হয়। গণহত্যার বিচার এবং সংস্কারেও জোর দেন দলটির নেতারা। জামায়াতের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করলেও নেতারা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তারা দাবি করেছেন। ওদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি নেতারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং গণপরিষদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবিসহ কয়েকটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

ওদিকে রোববার আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতিনিধিত্বশীল সব দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করবেন বলে তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেয়ার দাবি বিএনপি’র: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি’র প্রতিনিধিদল। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাস ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপি একটি লিখিত প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। বৈঠক শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, সংস্কার, আওয়ামী লীগের বিচার এবং নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করে এই তিনটি কাজ একসঙ্গে চলতে পারে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে বিএনপি দাবি জানিয়েছে। বিএনপি কখনও প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেনি- উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করেছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় শুরু হওয়া বৈঠক পৌনে নয়টায় শেষ হয়। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি শুরু থেকেই একটি জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। সুষ্ঠুু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে, পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। সেইজন্যে সবচাইতে আওয়ামী লীগের বিচার বেশি দাবি করে বিএনপি। এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পূর্ণ থাকলে, বিএনপি সরকারের দায়িত্ব পেলে তখন বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ করা হবে।

নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পূর্ণ করে ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে পুনরায় স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্টদের উপর বর্তাবে। সম্প্রতি নানা ধরনের গুজব রয়েছে, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। প্রথমদিন থেকেই এই সরকারকে বিএনপি সহযোগিতা করে আসছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আলোচনার মূল বিষয় সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই। সংস্কার চলমান বিষয়, এটা চলতে থাকবে। আমরা আশা করছি এই সরকার সকলের সঙ্গে বসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবেন। জনগণ চাইলে বিএনপি সরকারে এলে এগুলো বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা নেবে। আমরা অতীতের স্বৈরাচার সরকার ও তার কর্তাব্যক্তিদের বিচার চাই। আমরা বিচারের পক্ষে, কিন্তু স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। এটাও কোনো দিন তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া সম্ভব না। জনগণ যদি চায় বিএনপি ক্ষমতায় গেলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে এর বিচার সম্পন্ন করা হবে।

উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা যাদের কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাদেরকে বাদ দেয়ার জন্য আজকেও আমরা বলেছি।

দুই বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াত: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে মূলত দু’টি বিষয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন তারা। তিনি বলেন, আমরা বলেছি দুইটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। একটা বলেছি, নির্বাচনটা কখন হবে? আপনি যে সময়সীমা দিয়েছেন, এর ভিতরেই জনগণের কোনো বড় ধরনের ভোগান্তি না হয়ে একটা কমফোর্টেবল টাইমে নির্বাচনটা হওয়া দরকার। দুই নম্বর আমরা বলেছি, এই নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং বিচারের কিছু দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। জামায়াত আমীর বলেন, সংস্কার শেষ না করে যদি কোনো নির্বাচন হয়, এই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এখন করা সম্ভবও না। মাত্র ৫টা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তারা হাত দিয়েছেন। এতটুকু নিষ্পত্তি করা দরকার সন্তোষজনকভাবে।
তিনি বলেন, দেশ আমাদের সবার। দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। এখন যারা সরকারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিচয় হলো তারা কোনো পার্টিকে বিলং করবেন না। কিন্তু এটা এখানে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থেকে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা দেননি। যা নিয়ে পরে নানা তথ্য বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে সমাজে একটা অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক দেখা দেয়। একই সময়ে একজন রাজনৈতিক নেতা তার জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গা থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন। আরেকটা দাবি নিয়ে আরেক দল অবস্থান নিয়েছে। এ সব কিছু প্রধান উপদেষ্টার জন্য কিছুটা কষ্টের। কিছুটা বিরক্তির ছিল। যার কারণে তিনি তার দায়িত্বের ব্যাপারে পুনর্বিবেচনা করার কথা ভেবেছেন। বৈঠকে দলের আমীরের সঙ্গে নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের উপস্থিত ছিলেন।

ইসি সংস্কার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং গণপরিষদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে এনসিপি: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আলোচনায় জুলাই ঘোষণা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেন জারি করা হয় সেই দাবি জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে আগাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি করার দাবি জানিয়েছি। শেখ হাসিনার আমলে হওয়া জাতীয় ও স্থানীয় সব নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে বলেছি। সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেই সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এসব নির্বাচন বর্জন করেছিল।

তিনি বলেন, এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপি আস্থা রাখতে পারছে না। এই কমিশন সংস্কার করে যাতে স্থানীয় সরকার আয়োজন করা হয়। জুলাই গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন (গণপরিষদ) এই তিনটির সমন্বিত রোডম্যাপ যাতে ঘোষণা করা হয় সেই দাবি আমরা জানিয়েছি। এর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আমরা চেয়েছি।
বৈঠকে দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এবং ডা. তাসনিম জারা অংশ নেন।

অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা: চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শনিবার শুরু হওয়া ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে আজ (রোববার) বিকালে আবারো বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় ভবন যমুনায় দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কর্মসূচি রয়েছে। এজন্য শনিবার বিভিন্ন দলের নেতাদের ফোন করে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আজ ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ অন্যান্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল রাতে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাইয়ুম জানান, তাদের দলের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীমকে রোববারের বৈঠকের জন্য যমুনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবাদিদের বলেছেন, আমরা রোববার ৫টায় যাবো যমুনায়। সেখানে যেতে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বৈঠক একসঙ্গে হবে নাকি আলাদা, বিষয়টি জানা যায়নি। তবে আমন্ত্রণের ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে, আলাদাভাবে বৈঠক হতে পারে। ওদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সেক্রেটারি শেখ ফজলুল করিম মারুফ জানান, রোববার বিকাল পৌনে ছয়টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, (পীর চরমোনাই)। এ ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, নেজামে ইসলামী পার্টি ও হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায় প্রতিনিধিত্বশীল অন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর করণীয় নির্ধারণ করবেন তিনি।

Leave a comment






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *