Main Menu

অনেক নাটকের পর বাংলাদেশ-ভারত যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন

শীতের রাতে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। গ্যালারিতে তখনও বেশ কিছু দর্শক অপেক্ষায়। অবিশ্বাস্য এক ম্যাচের পরিসমাপ্তি হলো সাড়ে চার ঘণ্টারও পর। অনেক নাটকের পর মঞ্চ সাজিয়ে অবশেষে ঘোষণা করা হলো সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে যৌথ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ও ভারত!

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই যে বাড়তি নাটকীয়তা এটা এখন সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত! পরতে পরতে জমে ছিল নাটক। ফাইনালে নির্ধারিত সময়ে খেলা ১-১ গোলে ড্রয়ের পর সরাসরি টাইব্রেকারে গেছে খেলা। সেখানেও ১১টি শটে দুই দল ১১টি করে গোল দিয়েছে। হঠাৎ সে সময় ম্যাচ কমিশনার শ্রীলঙ্কার ডি সিলভা সাডেন ডেথের শট বন্ধ করে টসে ভাগ্যে ফল নিষ্পত্তির ঘোষণা দেন। সেখানে বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী সেটা হওয়ার কথা ছিল না। ফলে স্বাগতিকরা সেটি মানতে চায়নি। প্রতিবাদের মুখে অনেকক্ষণ পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এবার বেঁকে বসে ভারত। তারা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে মাঠ ছেড়ে চলেও যায়।

আধঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হলেও সময় গড়ায় এক ঘণ্টার বেশি! এরপরও ম্যাচ কমিশনার কিছু জানাতে পারছিলেন না। তখন ড্রেসিংরুমে ভারতকে বলে কয়ে ম্যাচে ফেরার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলে। কিন্তু কোনও কিছুতেই সফল হওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত রাত ১০ টা ৪১ মিনিটে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ চ্যাম্পিয়ন! এটা আঁচ করতে পেরে আগেই এক পশলা উৎসব সেরে নিয়েছে সাগরিকা-রুমারা।

অথচ নির্ধারিত সময়ে খেলা যেভাবে এগিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের পরাজয়ের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল। ৮ মিনিটে প্রথম গোল হজম করে বসেছিল বাংলাদেশ। পরে যোগ হওয়া সময়ে সাগরিকার নাটকীয় এক গোলে বাংলাদেশ সমতা ফিরিয়েছে। তার পর টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী রূদ্ধশ্বাস টাইব্রেকার। নিয়ম অনুযায়ী ১১টি টাইব্রেকারেই স্কোর ছিল ১১-১১।

এর আগে অনেক আশা-প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে আসেন হাজারো দর্শক। লিগ পর্বে ভারতের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের একাদশে আজ একজন ছিলেন না। রুমা আক্তার ঢুকেছেন উমেহ্লার জায়গায়। ভারতের দলেও পরিবর্তন ছিল একটি। শাহিনার জায়গায় খেলছেন হিনা খাতুন।

তার পর বৃহস্পতিবার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে কৃত্রিম আলোতে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে শুরুটা ভালোই করে সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যরা। বাংলাদেশ আক্রমণও করে শুরুতে। কিন্তু সাগরিকার ক্রস অন্য প্রান্তে কেউই জায়গা মতো রিসিভ করতে পারেনি। বরং ভারত দ্রুত খেলার গতি আয়ত্তে নিয়ে গোল করে এগিয়ে গেছে। ৮ মিনিটে রক্ষণের ভুলে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মধ্যমাঠের একটু ওপর থেকে নিতু লিন্ডার থ্রু থেকে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল পেয়ে অরক্ষিত শিবানি দেবি বক্সে ঢুকে বুদ্ধিদ্বীপ্ত গোল করেন। এসময় গোলকিপার স্বপ্না রানী মন্ডল জায়গা ছেড়ে এগিয়ে আসলেও ব্লক তৈরি করতে পারেননি। শিবানি তার পাশ দিয়ে দারুণভাবে প্লেসিং করে স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন।

১৭ মিনিটে শিবানি আবারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে এই ফরোয়ার্ডর শট ক্রস বারের ওপর দিয়ে গেছে। বাংলাদেশ রানিংয়ে বার বার ভারতের খেলোয়াড়দের পরাস্ত করলেও দলীয় নৈপুণ্য উপহার দিতে পারেনি। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়টা সেভাবে ছিল না। প্রতিপক্ষের বক্সে ঢোকার আগেই অনেক সময় খেই হারাতে হয়েছে।

৩৫ মিনিটে স্বপ্না রানী দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নিলেও তা ক্রস বারের ওপর দিয়ে গিয়ে সবাইকে হতাশ করেছে। দুই মিনিট পর-ই স্বপ্নার একইভাবে জোরালো শট গোলকিপার তালুবন্দি করে তাদের হতাশ করেছেন।
এখন দেখার বিরতির পর ঘুরে দাড়াতে পারে কিনা বাংলাদেশ।

বিরতির পর স্বাগতিকদের মধ্যে গোল শোধের চেষ্টা ছিল দেখার মতো। কিন্তু সেই আগের মতো প্রতিপক্ষের ডি বক্সে গিয়ে খেই হারাতে কিংবা রক্ষণে এসে বাধা পেতে হয়েছে। তবে বাংলাদেশ আশা ছাড়েনি। শেষ দিকে এসে ম্যাচ জমে যায়।৮৭ মিনিটে স্বপ্না রানীর ক্রস সরাসরি ক্রসবারে লেগে অন্য প্রান্তে চলে যায়। পরের মিনিটে ভারতও সুযোগ পায়। বক্সে ঢুকে নেহার শট ক্রস বার ছুঁয়ে বাইরে চলে যায়।

আর যোগ করা সময়ে ভাগ্য খুলে যায় বাংলাদেশের। কানন বালার লং বল থেকে ভারতের এক ডিফেন্ডারের হেড সাগরিকা পা বাড়িয়ে বক্সের ভেতরে নিয়ে গোলকিপারের বাঁ পাশ দিয়ে দলকে সমতায় ফেরান। যা ছিল বাংলাদেশের ম্যাচে ফেলার মূল রসদ! এরপর তো টাইব্রেকার শেষে জন্ম নেয় নাটকীয়তার!

Leave a comment






এই বিভাগের আরো সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

shuddhobarta24
Privacy Overview

This website uses cookies so that we can provide you with the best user experience possible. Cookie information is stored in your browser and performs functions such as recognising you when you return to our website and helping our team to understand which sections of the website you find most interesting and useful.